২১ ডিসেম্বরের পরে বসে যেতে চলেছে সমীক্ষা হওয়ার সময়সীমা ফুরোতে চলা আরও পাঁচটি লঞ্চ। —ফাইল চিত্র।
ভূরি ভূরি দুর্নীতির সঙ্গে যোগ হয়েছিল যাত্রী-নিরাপত্তার ব্যাপারে চরম উদাসীনতার অভিযোগ। তারউপরে ছিল তীব্র অর্থসঙ্কট। এরই মধ্যে মাস সাতেক আগে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরীর সুপারিশ মতো তৈরি হয় হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির মনোনীত পরিচালকমণ্ডলী। কিন্তু তার পরেও গঙ্গায় ফেরি পরিষেবায় পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র বদল হয়নি বলে অভিযোগ। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ড্রাই ডক’ (লঞ্চের স্বাস্থ্য পরীক্ষা) না হওয়ায় ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে ১৫টি লঞ্চ। এ বারএকই কারণে আগামী ২১ ডিসেম্বরের পরে বসে যেতে চলেছে সমীক্ষা হওয়ার সময়সীমা ফুরোতে চলা আরও পাঁচটি লঞ্চ। সব মিলিয়ে ঘোর সঙ্কটের মুখে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। পরিস্থিতি মেনেও নিয়েছেন পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যেরা। তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আরও কয়েক মাস সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে জলপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’। প্রতিদিন এই সংস্থার লঞ্চে কয়েকশো যাত্রী বিভিন্ন রুটেযাতায়াত করেন। কিন্তু এই সমিতিকে কেন্দ্র করে বিবিধ অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক দশকে। বিশেষত, লঞ্চগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দিকে এতটুকু নজর না দেওয়ায় যাত্রী-সুরক্ষার দিকটি যে বার বারউপেক্ষিত হচ্ছে, সেই অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। গঙ্গায় লঞ্চে যাত্রী পরিবহণের জন্য প্রতি বছর সমীক্ষা করে ‘ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় ট্রান্সপোর্ট’ (আইটিডব্লিউ)। এর পাশাপাশি, লঞ্চগুলির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সেগুলির ‘ড্রাই ডক’ করানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ‘ড্রাই ডক’ না হলেসমীক্ষা করে না আইটিডব্লিউ। আর সমীক্ষা না হলে সেই লঞ্চটি যাত্রী পরিবহণের যোগ্য বলে বিবেচিতহয় না।
সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর ধরে ‘ড্রাই ডক’ না হওয়ায় ধীরে ধীরে বসে গিয়েছে ১৫টি লঞ্চ। ভগ্নপ্রায় ওইলঞ্চগুলিকে কলকাতার আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে নোঙর করে রাখাহয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, ‘ড্রাই ডক’ না হওয়ায় এক মাস পরে বন্ধ হতে চলেছে আরও পাঁচটি লঞ্চেরপরিষেবা। সেগুলির মধ্যে তিনটি লঞ্চ— এমভি কংসাবতী, এমভি মতিঝিল এবং এমভি মেঘমা চলে হাওড়া-নাজিরগঞ্জ রুটে। বাকি দু’টি লঞ্চ— এমভি দৃষ্টি এবং এমভি চোখাচোখি চলে হাওড়া-বাউড়িয়া রুটে। প্রথম তিনটি লঞ্চেরসমীক্ষার সময়সীমা ফুরোচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর, বাকি দু’টির ২১ ডিসেম্বর। উল্লেখ্য, গত বছর মোট আটটিলঞ্চ বসে যাওয়ার পরে যাত্রীপরিষেবা অব্যাহত রাখতে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায়সমিতি পাঁচটি লঞ্চ ভাড়া নিয়েছিল রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমেরকাছ থেকে।
সমবায় সমিতির এক কর্তা বলেন, ‘‘আইটিডব্লিউ ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা সমীক্ষার সময়সীমা আর বাড়াবে না। কারণ, গত পাঁচ বছর ধরে ড্রাই ডক না হওয়া লঞ্চগুলি আর যাত্রী পরিবহণের উপযুক্ত নয়। এর সঙ্গে কোনওরকম আপস করা হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।’’
এই বিষয়ে সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান তথা হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রাইচরণ মান্না বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আরও কয়েক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছি। তাতে সাড়া না মিললে পাঁচটি লঞ্চ বসে যাবে।তবে, এমভি নন্দিনী নামে একটি লঞ্চ মেরামত হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই সেটি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, লঞ্চ মেরামতির জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা পাচ্ছি। ওই টাকায় আরও কয়েকটি লঞ্চ মেরামত করে পরিষেবায় নামানো হবে।’’