শুধু শিল্পে জমি-যন্ত্রণা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রেও অন্যতম মূল সমস্যা জমি। আপাতত সেই জট জটিলতর হয়েছে সুন্দরবনে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক এক লাফে তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় আয়লার ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনে নদীবাঁধ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে।
প্রথম দফার ৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ এগোলেও জমি না-পাওয়ায় পরের ধাপের জন্য এগোতে পারছে না রাজ্য। সরকারি মুখপাত্রের কথায়, কেন্দ্র না রাজ্য, ক্ষতিপূরণের বাড়ি অর্থ কে দেবে, তার সিদ্ধান্ত না-হওয়ায় কাজ থমকে রয়েছে।
সেচমন্ত্রী রাজীর বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাইরে বলেন, ‘‘এ বছরেই ৫০ কিলোমিটার নদীবাঁধের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। শেষ হলে পরবর্তী ধাপের কথা ভাবা হবে।’’ তিনি জানান, যে-ভাবে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে, তাতে পুরনো নকশায় বাঁধ তৈরি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই বাঁধের জন্য বিকল্প নকশা তৈরি করে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাতে অত জমি লাগবে না।
২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আয়লায় বিধ্বস্ত হয়ে যায় সুন্দরবন। নদীবাঁধ তৈরি করে সুন্দরবনের বিপর্যয় রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে উদ্যোগী হয়। ঠিক হয়, সুন্দরবন বাঁচাতে ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হবে। তার জন্য অধিগ্রহণ করা হবে ১৪ হাজার একর জমি। খরচ হবে ৫০৩২ কোটি টাকা। ৭৫:২৫ অনুপাতে সেটা দেবে কেন্দ্র ও রাজ্য। জমি অধিগ্রহণের খরচ ধরা হয় ৯০০ কোটি টাকা।
প্রথম পর্যায়ে ১১৭ কিলোমিটার বাঁধ দিতে লাগবে ৪৬০০ একর জমি। এক সেচকর্তা জানান, ২০৩৬ একর জমি হাতে এসেছে। সেই জমিতে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হচ্ছে। বাকি জমি চেয়ে মালিকদের নোটিস দেওয়া হলেও গোল বেধেছে প্রথম পর্যায়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়েই। পুরনো জমি অধিগ্রহণ আইনে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ২০৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন জমি অধিগ্রহণ আইনে ক্ষতিপূরণের যে-‘প্যাকেজ’-এর কথা বলা হয়েছে, তাতে খরচ বাড়বে অন্তত তিন গুণ। প্রশ্ন হল, ওই টাকা কোন সরকার দেবে। তার মীমাংসা না-হওয়ায় অধিগ্রহণের কাজ আটকে গিয়েছে।
এ দিন বাজেট-বিতর্কে যোগ দিয়ে আয়লার প্রসঙ্গ তোলেন আরআসপি বিধায়ক নর্মদাচন্দ্র রায়। সেচমন্ত্রীর অভিযোগ, আয়লার পরে বাম সরকার দু’বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা এক একর জমিও অধিগ্রহণ করতে পারেনি। তিনি জানান, আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় বাঁধের জন্য এ-পর্যন্ত ৫৩২ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। প্রথম পর্যায়ে তাদের মোট বরাদ্দ করার কথা ১৩৩৯ কোটি।
কংগ্রেসের সাবিনা ইয়াসমিন বিধানসভায় জানান, মালদহে ভাঙনে যে-জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছিল, তার একটি অংশ চর হয়ে উঠছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী জমি নদীগর্ভে চলে গেলে তার মালিক হয়ে যায় রাজ্য সরকার। তাই চরের জমির মালিকানা হারাচ্ছেন আসল মালিকেরা। সাবিনার দাবি, চরের মালিকানা পাট্টার মাধ্যমে সাবেক জমি-মালিকদের দেওয়া হোক। তাঁর অভিযোগ, গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রোধে এই সরকার কিছুই করছে না। জবাবে মন্ত্রী জানান, যে-কাজ ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষের করার কথা, তাঁরা সেটা না-করায় রাজ্য ৭৮ কোটি টাকা খরচ করে করছে। চলতি অর্থবর্ষেও সেখানে ১০ কোটি টাকার কাজ করবে রাজ্য।