বগটুই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখ। ফাইল চিত্র।
নোটিস মূলত তারাই দেয় এবং বগটুই কাণ্ডের তদন্তে নানা জনকে তা দিয়েওছিল। বগটুই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যমৃত্যুতে সেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ই এ বার নোটিসের মুখে। রবিবার সিবিআইয়ের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকাকালীন লালনের অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চায় রাজ্যের গোয়েন্দা পুলিশ। তাই এই নোটিস। তাতে বলা হয়েছে, ১২ ডিসেম্বর, সিবিআইয়ের হেফাজতে লালনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দিন কারা ডিউটিতে ছিলেন, কার কী ভূমিকা ছিল— সবই জানাতে হবে দ্রুত।
এক সিআইডি-কর্তা জানান, হেফাজতে থাকাকালীন লালনের মৃত্যু সংক্রান্ত সব কিছুর বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও চাওয়া হয়েছে। রামপুরহাটে সিবিআইয়ের সেই অস্থায়ী শিবিরে হেফাজতে থাকা অভিযুক্তদের দেখভালের দায়িত্ব কাদের উপরে ন্যস্ত ছিল, চাওয়া হয়েছে তাঁদের নামের তালিকা। পাঠাতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সিবিআই অফিসারদের বিবরণও।
ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত অবশ্য নির্দেশ দিয়েছে, এই ঘটনায় সিবিআই অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না সিআইডি। ২১ ডিসেম্বর কলকাতা হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি রয়েছে।
রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরের শৌচালয়ে লালনের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় ১২ ডিসেম্বর। ওই অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেছেন বলে সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়। কিন্তু লালনের স্ত্রী রেশমা বিবির অভিযোগ, সিবিআই মারধর করে তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। তিনি সাত জন সিবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, হুমকি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে মামলা করেন। রাজ্য সরকারের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। সেই তদন্তে রামপুরহাটে অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্পে গিয়েছিলেন রাজ্য সিআইডি-র আইজি (২) সুনীলকুমার চৌধুরী। সিআইডি আধিকারিক এবং ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। বগটুই গ্রামে গিয়ে রেশমা-সহ বিভিন্ন জনের বয়ান নথিভুক্ত করেন তাঁরা। জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ঘটনার দিন লালনের সঙ্গে সিবিআই ক্যাম্পে থাকা অভিযুক্ত বন্দি জাহাঙ্গির শেখকে।
সিআইডি সূত্রের খবর, লালনের পরিবার এবং জাহাঙ্গিরের তরফে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করা হয়েছে, সিবিআই হেফাজতে লালনকে মারধর করেছেন তদন্তকারীরা। দাবি, লালনের পায়ের নীচের দিকে কিছু আঘাতের চিহ্ন মিলেছে ময়না-তদন্তে। তা মৃত্যুর আগেকার চিহ্ন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। তবে সেই সব আঘাতের জন্যই লালনের মৃত্যু হয়েছে, এমন কোনও তত্ত্ব তদন্তকারীরা এখনও পাননি বলেই দাবি সিআইডি সূত্রের। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ এবং তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে তদন্তকারীদের মনে হচ্ছে, ঝুলন্ত অবস্থায় লালনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সিআইডি-র তরফে সরকারি ভাবে কেউ কিছু বলতে চাননি।
এ দিকে, সিবিআই অফিসারদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ঢুকে চুরির অভিযোগ করেছেন রেশমা। অভিযোগপত্রে কারও নাম না-থাকলেও শনিবার রেশমার নালিশ পেয়ে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮০ ধারায় মামলা রুজু করেছে রামপুরহাট থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, সিবিআই হেফাজতে থাকা লালনের বাড়ির যাবতীয় আসবাব, টাকা, গয়না চুরির অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী।
গত ২১ মার্চ বগটুইয়ে কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে বেশ কয়েক জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার দশ দিনের মাথায়, ৩১ মার্চ সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা লালনের সন্ধানে বগটুই পূর্ব পাড়ায় তাঁর নির্মীয়মাণ দোতলা পাকা বাড়িতে তল্লাশি চালান। সেখানে লালনের সন্ধান না-পেয়ে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-সহ রামপুরহাট থানার পুলিশের উপস্থিতিতে সিবিআই তাঁর বাড়ি সিল করে দেয়। লালনের অপমৃত্যুর পরে, গত ১৩ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে তাঁর বাড়ির সেই সিল খোলা হয়।
বগটুই কাণ্ডের পরে গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে সিসি ক্যামেরা-সহ পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও কী ভাবে লালনের বাড়িতে চুরি হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। রবিবারেও লালনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজন ও পড়শিদের বয়ান নথিভুক্ত করে সিআইডি।
অন্য দিকে, বগটুইয়ের আগুনে ১০ জনের মৃত্যুর পরে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে ওই গ্রামে দেখা না-গেলেও এ দিন দুপুরে তিনি লালনের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ওই সাংসদ জানান, সিবিআই হেফাজতে লালনের মৃত্যু নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন। আর শতাব্দীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে রেশমা বলেন, ‘‘উনি আমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’