police

অলিগলিতে নজর নেই, ঢুকছে দুষ্কৃতীও

ইসলামপুরের পাশ দিয়ে গিয়েছে মাসনা নদী। সেই নদীর উপর দেখা গেল, বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো পেরোলেই অদ্বৈতনগর গ্রাম, যা শমসেরগঞ্জের মধ্যে পড়লেও তাকে ঘিরে রেখেছে ঝাড়খণ্ডের ভবানীপুর গ্রাম।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:২৩
Share:

ট্র্যাক্টরটি যে দিকে মুখ করে রয়েছে, সে দিকে গেলে বীরভূম। একেবারে ডান দিকে যে রাস্তা গিয়েছে, সেটি মুর্শিদাবাদের সুতির দিকে এবং বাঁ দিকে যে দু’টি রাস্তা দেখা যাচ্ছে, সে দু’টি গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দিকে। নিজস্ব চিত্র।

সুতির বহুতালি রাজ্য সড়ক ধরে একটু এগোতেই জাল্লার মোড়। এখান থেকে তিনটি পথ গিয়েছে তিন দিকে। উত্তর পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়। উত্তরে বীরভূম। দক্ষিণ-পূর্বে মুর্শিদাবাদ। কোথাও কোনও পুলিশের দেখা নেই।

Advertisement

তেমাথার মোড়ের পাশেই বাড়ি ডালিম শেখের। পুলিশ নজরদারি কেমন? ডালিম বলছেন, “সারা বছর এমনই খোলামেলা পথ। এই পথ দিয়ে গাড়িও ঢোকে ঝাড়খণ্ড থেকে। কিছু দূরেই কাদোয়া বিট হাউস। মাঝে মধ্যে সেখান থেকে পুলিশ অবশ্য আসে টহল দিতে। কিন্তু নিয়মিত টহলদারি নেই।” গ্রামবাসীদের দাবি, তারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পূর্বতন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর বোমা হামলায় ধৃত প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় ঝাড়খণ্ডের গ্রাম থেকেই। এনআইএ জানিয়েছিল, মন্ত্রীর উপরে হামলার জন্য সেখান থেকেই আনা হয়েছিল সেই বিস্ফোরক।

এই পথে নিষিদ্ধ শব্দবাজিও যে অবাধে আসবে, তা নিয়ে সংশয় নেই গ্রামবাসীদের একাংশেরও। উৎসবের মরসুমে ঝাড়খণ্ডে শব্দবাজি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা নেই। সেই সুযোগটাই কিছু অসাধু ব্যক্তি নিচ্ছেন বলে দাবি। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘যে পথ দিয়ে দুষ্কৃতীরা বিস্ফোরক নিয়ে যাতায়াত করে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই দাবি, সেই পথ দিয়ে নিষিদ্ধ বাজি আনা আর এমন কী কথা!’’ মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি ফরাক্কায় যে বিশেষ শব্দবাজি ‘অ্যাটম বোমা’ ফেটে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, তা-ও এমনই কোনও একটি পথ দিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে ঢোকে।

Advertisement

এই সব পথ দিয়ে যাতায়াত কতটা সহজ? চণ্ডীতলার কথাই ধরা যাক। তার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের সীমানা। সেখানে ঝাড়খণ্ডের যে স্কুলটি আছে, তাতেই ভর্তি হয় পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়ারাও। চণ্ডীতলার মতো সুতি-২ ব্লকের উমরাপুর, সাহাজাদপুর, বাউরিপুনি গ্রামগুলির পশ্চিমে তাকালে ঝাড়খণ্ডের উন্মুক্ত মাঠ। মধ্যে দিয়ে আলপথ বা মেঠো জমির পথ। পুলিশ চোখে পড়ল না। চণ্ডীতলার ভিতর দিয়ে গিয়ে পাকা রাস্তাটি সোজা উঠেছে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে। ছোট গাড়ি ও মোটরবাইক যেতে পারে সহজেই। এক প্রাক্তন প্রধানের কথায়, “না, সেখানেও পুলিশের নজরদারি নেই।”

শমসেরগঞ্জে ধুলিয়ান-পাকুড় রাজ্য সড়ক ঝাড়খণ্ডে ঢুকছে শেখপুরায়। এই সড়ক দিয়ে কয়েকশো পাথরের ট্রাক ঢোকে। এখানেই রয়েছে ঝাড়খণ্ডের কর আদায়ের অফিস। ঘন বসতির বাণিজ্যকেন্দ্র, স্বভাবতই শমসেরগঞ্জে পুলিশের নজরদারি আছে। কিন্তু এর পাশেই ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার বিকল্প পথ। বাঁ দিকে একটি পাকা রাস্তা ধরে সোজা ইসলামপুর। সেই গ্রামের কিছুটা এ রাজ্যের, কিছুটা ঝাড়খণ্ডের। চার কিলোমিটার রাস্তায় কোনও পুলিশ চোখে পড়েনি। অথচ এই পাকা সড়ক গিয়ে ঠেকেছে পাকুড়ের বাইপাস সড়কে। এখান দিয়ে রোজ কয়েকশো ট্রাক, ট্র্যাক্টর ঢুকছে শমসেরগঞ্জে। স্থানীয় বাসিন্দা রহিম শেখ বলছেন, “এই পথে দুই রাজ্যের কোনও পুলিশের বালাই নেই। কোনও চেকপোস্টও নেই।’’

ইসলামপুরের পাশ দিয়ে গিয়েছে মাসনা নদী। সেই নদীর উপর দেখা গেল, বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো পেরোলেই অদ্বৈতনগর গ্রাম, যা শমসেরগঞ্জের মধ্যে পড়লেও তাকে ঘিরে রেখেছে ঝাড়খণ্ডের ভবানীপুর গ্রাম। ভবানীপুর থেকে সোজা রাস্তা রয়েছে ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার। পুলিশি নজরদারি নেই এখানেও।

ক’দিন আগেই দিন দুপুরে ফরাক্কায় প্রায় দু’কোটি টাকা লুট করে ব্যাঙ্ক ডাকাতেরা এই আলপথে ধরেই ঝাড়খণ্ডে পালানোর চেষ্টা করে। শেষে ধরা পড়ে যায় গ্রামবাসীদের হাতে। এই ঘটনার পর থেকে নাকা চেকিং কিছুটা বাড়িয়েছে পুলিশ। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয়, তা বারবার ধরা পড়েছে গ্রামবাসীদের কথায়।

ফরাক্কার এসডিপিও অসীম খান অবশ্য বলছেন, “সব গ্রামীণ পথে তো নাকা চেকিং সম্ভব নয়। কয়েকটি পথে কড়া নাকা চেকিং রয়েছে। তবে পুলিশের নজরে রয়েছে ঝাড়খণ্ডগামী সব পথই।” এত যখন চোরা-পথ, যেখান দিয়ে দুষ্কৃতী প্রবেশের উদাহরণও রয়েছে, সেখানে নজর রাখা হবে না কেন— এই প্রশ্ন উঠেছে। আবার প্রশ্ন উঠেছে, বাজি উদ্ধারে অভিযানে কি পুলিশের ঢিলেমি ছিল? এলাকায় তারা সামান্য খোঁজ নিলেই জানতে পারত, বাজির চাহিদা আছে। ফলে বেড়েছে শব্দবাজি ‘আমদানি’ ও বিক্রি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘শব্দ তো পুলিশও পেয়েছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, যেখানেই সন্দেহ হয়েছে অভিযান হয়েছে। কিন্তু ফাঁক গলে যারা বেরিয়ে গিয়েছে, সেখানেই রয়ে গিয়েছে বাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement