হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে শুধু তাঁকেই প্রায় ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই টাকায় কী কী করেছেন হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ? সদুত্তর না-মিললেও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি সূত্রের দাবি, বাংলায় এবং ভিন্ রাজ্যের ভোটে টাকা ঢেলেছেন ওই যুব নেতা। সেই টাকা ওই দুর্নীতির সূত্রেই তাঁর হাতে পৌঁছেছিল কি না, তাঁকে জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছে ইডি।
কুন্তলের বাড়ি থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে ইডি। তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, সেই ডায়েরি থেকে জানা গিয়েছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলির এক মহিলা প্রার্থীর প্রচারে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছিলেন কুন্তল। ভোটের প্রচারেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ভোটে জিতলে ওই প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী হবেন, এমনটা আঁচ করেই তাঁর প্রচারে টাকা ঢেলেছিলেন কুন্তল। যদিও ওই প্রার্থী ভোটে হেরে যান। ইডি সূত্রের দাবি, ভোটে টাকা ঢালার কথা জেরায় স্বীকার করেছেন কুন্তল। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে পাওয়া টাকা ওই খাতে খরচ হয়েছে বলে ইডি-র সন্দেহ।
ইডি সূত্রের দাবি, শুধু নিজের জেলার ওই মহিলা প্রার্থীর প্রচারেই নয়, কুন্তলের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী ভিন্ রাজ্যের নির্বাচনী
প্রচারেও তিনি টাকা ঢেলেছিলেন। সেই টাকাও নিয়োগ দুর্নীতি থেকেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কুন্তলের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বিশদ ভাবে পরীক্ষা করছে ইডি। এ ব্যাপারে কুন্তলকে জেরাও করা হচ্ছে।
হুগলি তৃণমূলের অন্য যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পরপর তিন দিন তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র অফিসে তাঁকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তল ও তাপস মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর পূর্বপরিচয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন শান্তনু। কিন্তু কুন্তলের সঙ্গে শান্তনুর ‘ঘনিষ্ঠতার তথ্যপ্রমাণ’ তাদের হাতে এসেছে এবং শান্তনুর বাড়িতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি এবং প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগের বহু নথি পাওয়া গিয়েছে বলেও ইডি সূত্রের দাবি।
ইডি সূত্রের দাবি, কুন্তল ও শান্তনুর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা লেনদেন হয়েছে এবং সেই টাকা বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছেও গিয়েছে। সূত্রের আরও দাবি, কুন্তল এবং প্রভাবশালীদের মধ্যে শান্তনুই ছিলেন যোগসূত্র। দু’জনে কলকাতায় অফিসও খুলেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, শান্তনু সম্পর্কে এত ‘তথ্য’ রয়েছে বলে যখন ইডি সূত্রের দাবি, তখন পরবর্তী পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? ওই সূত্রের দাবি, যে-সব তথ্য মিলেছে, সেগুলি যাচাই করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি বিএড, ডিইএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস দাবি করেছেন, তাঁর কাছ থেকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন কুন্তল। গোপাল দলপতি নামে অন্য এক ব্যক্তি তাঁকে আরও সাড়ে ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ইডি-র সন্দেহ, ওই ৩০ কোটি টাকা আদতে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। গোপাল এখন তিহাড় জেলে বন্দি। সেখানে গিয়ে তাঁকে জেরা করার আইনি প্রস্তুতি শুরু করেছে ইডি।
এ দিন ইডি-র আঞ্চলিক দফতর থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার পথে কুন্তল দাবি করেন, ‘‘তাপস-ঘনিষ্ঠ গোপাল কোটি কোটি টাকা তুলেছে। আমি চক্রান্তের শিকার।’’ তবে শান্তনুকে নিয়োগ-দুর্নীতির টাকা দেওয়া হয়েছিল কি না, তার উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, গোপাল জেলে থাকায় নিজেদের আড়াল করতে গোপালের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করতে পারেন কুন্তল। তাই গোপালকে জেরা করার কথা ভাবা হয়েছে।