(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’। সনোজকুমার মিশ্র পরিচালিত ছবিটির মুক্তি আটকাতে হাই কোর্টে মামলাও হয়েছিল। কিন্তু আদালত ছবিমুক্তিতে হস্তক্ষেপ করেনি। এ বার ওই ছবির প্রসঙ্গে কলকাতার সিনেমাপাড়ার কলাকুশলীদের একহাত নিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। টালিগঞ্জের কিছু শিল্পীকে পরোক্ষে সুবিধাবাদী বললেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, প্রয়োজনের সময়ে ওই শিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকেন, হাত নেড়ে ছবি তোলেন। কিন্তু শাসকদলের দুঃসময়ে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টান্তও টেনেছেন কুণাল। ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর পাল্টা কিছু টালিগঞ্জ থেকে কেন তৈরি করা হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
সনোজকুমারের ছবিটি নিয়ে মূল অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি খারাপ করার উদ্দেশ্যে ওই ছবি তৈরি করা হয়েছে। কুণালও সে কথাই বলেছেন। শুক্রবার সকালে তিনি বলেছেন, ‘‘মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা এমন কিছু রাজনৈতিক ছবি তৈরি করেন, যা সমাজে বিজেপির পক্ষে ন্যারেটিভ গড়ে তোলে। এ বার তো বাংলা নিয়েও কুৎসার ঝুলি আসছে! অথচ টলিগঞ্জের বাবু-বিবিরা, যাঁরা মমতাদির পাশে, দলে, মঞ্চে, ছবির ফ্রেমে থাকেন, তাঁরা নিজেদের ভাবমূর্তি গড়তে, পেশার সৌজন্য নিয়ে ব্যস্ত।’’ মুখ্যমন্ত্রীর জীবন নিয়ে ছবি তৈরি করে জনমানসে তৃণমূলের পক্ষে ‘সদর্থক বার্তা’ দেওয়ার কথাও টালিগঞ্জ ভাবে না, অনুযোগ কুণালের। বলেছেন, ‘‘টালিগঞ্জের কলাকুশলীরা দিদির পাশে ছবি দিয়ে নিজেদের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেন, কিন্তু মমতাদির বায়োপিক বা তৃণমূলের পক্ষে বার্তা যেতে পারে, এমন কোনও সিনেমা তৈরির কথা তাঁরা ভাবেন না। দলের সুসময়ে এঁরা হাত নেড়ে সামনে থাকেন। কিন্তু দল একটু বিতর্কিত ইস্যুতে পড়লেই এঁরা মুখবন্ধ করে দেন। সামনে থেকে মানুষকে বোঝানোর কাজে এঁদের পাওয়া যায় না। দল না বললে কর্মসূচিতেও পাওয়া যায় না।’’
‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ছবিটির নাম করেননি কুণাল। তবে তা নিয়েই যে বার্তা দিয়েছেন, বুঝতে অসুবিধা হয় না। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাকে কুৎসিত আক্রমণ করে ছবি আসছে, দেশে-বিদেশে বাংলার ভাবমূর্তি খারাপ করার চক্রান্ত চলছে, টালিগঞ্জের কলাকুশলীরা কি তা জানেন না? অথচ এঁরা তার পাল্টা কিছু করবেন না, করতে চাইবেন না। এঁরা দলের বোঝা।’’
কার বা কাদের দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন কুণাল? তৃণমূলের বিভিন্ন সভায় মঞ্চে টালিগঞ্জের অনেক তারকাকেই থাকতে দেখা যায়। কয়েক জন তো দলের টিকিটে ভোটেও জিতেছেন। ঘাটালের সাংসদ দেব টালিগঞ্জের প্রথম সারির তারকা। এ ছাড়াও, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, শতাব্দী রায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ভোটে জিতে কেউ সাংসদ কেউ বিধায়ক হয়েছেন। ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ প্রসঙ্গে কুণাল তাঁদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন কি না, স্পষ্ট নয়। তিনি কারও নাম নেননি। এঁরা ছাড়াও টালিগঞ্জের অন্যদের বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের সভায় দেখা গিয়েছে। সকলকে অবশ্য ‘দলের বোঝা’ বলতে চাননি কুণাল। উল্লেখ করেছেন, ‘‘এঁদের কেউ কেউ আন্তরিক। বাকি ক্ষমতাশালী তারকাদের নিয়ে দল ভাবুক।’’
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে টেকনিশিয়ানদের একাংশের কর্মবিরতিতে টালিগঞ্জে শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুটিং ফ্লোরে গিয়েও দিনের পর দিন খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছিল তারকাদের। টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কুণালের সম্পর্ক খুব একটা ‘মধুর’ ছিল না। তবে এ ক্ষেত্রে দেখা গেল, টেকনিশিয়ানদের ভূমিকা অনেক বেশি সদর্থক বলে মনে করছেন তিনি। তারকাদের কটাক্ষ করার পাশাপাশিই কুণাল বলেছেন, ‘‘বরং টেকনিশিয়ানরা অনেক বেশি দরদি।’’ অর্থাৎ, শাসকদলের পাশে থাকার ক্ষেত্রে টালিগঞ্জের বড় এবং ছোট পর্দার তারকাদের চেয়ে টেকনিশিয়ানদের এগিয়ে রেখেছেন কুণাল।
উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে তৃণমূল। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। আরজি করের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলেছে। মমতা অবশ্য প্রথম থেকেই দোষীর ফাঁসির দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে অনেক তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রতি দিনই আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে শহরে। ঘটনার তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। আরজি কর-অস্বস্তির মাঝেই রাজ্যে মুক্তি পাচ্ছে ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’, তৃণমূল সরকারের আমলের বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনা যেখানে তুলে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর আগে বলিউডে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মতো ছবির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ছবিগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৈরি। পশ্চিমবঙ্গে সে সব ছবির মুক্তি নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। এই আবহে টালিগঞ্জের একাংশের তারকাকে আক্রমণ করলেন কুণাল।