—প্রতীকী চিত্র।
পাঁচ-দশ লক্ষ নয়। আয়কর প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে হিসাব-বহির্ভূত ১৮০ কোটি টাকা সাদা করিয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে। একদা তিনি ছিলেন তৃণমূল নেতা, এখন বিজেপি-তে। প্রায় ছ’বছর বাদে প্রশ্ন উঠছে সেই টাকার উৎস নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় যখন বাংলার বহু প্রভাবশালী নেতার বিপুল অর্থের উৎসের খোঁজ চলছে, ওই দলবদলু নেতার ক্ষেত্রেও তা হবে না কেন?
এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ওই নেতার অর্থের উৎস সন্ধানের আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও বর্তমানে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআই-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারা এই বিষয়ে চিঠি লিখেছে ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-এ। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন ডিওপিটি-র অধীনেই কাজ করে সিবিআই।
কুণালবাবুর অভিযোগ, নোটবন্দির পরে কালো এবং হিসাব-বহির্ভূত টাকা সাদা করার জন্য আয়কর দফতর একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করেছিল। তাতে বলা হয়, হিসাব-বহির্ভূত টাকা আয়কর দফতরের কাছে জমা দিলে তার ৪০ শতাংশ কেটে নিয়ে বাকিটা সাদা করে দেওয়া হবে। সেই সময় অসংখ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ওই প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে কালো টাকা সাদা করিয়ে নেন। এমনকি সেই সময় কলকাতায় আয়কর দফতরের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে এই কালো টাকা সাদা করার প্রকল্পের সাফল্যের কথা জানানো হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল, বাংলার একটি রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির এক নেতা সাদা করার জন্য ওই প্রকল্পে ১৮০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেই নেতার নাম তখন জানানো হয়নি। এ বারেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি তাঁর নাম।
কালো টাকা সাদা করার সময় ওই ব্যক্তি ছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। গত বছর সেই নেতা বিজেপি-তে যোগ দেন। তার পরেই চিঠি পাঠান কুণালবাবু। অভিযোগ, তার আগেই, ২০১৮ সালে ওই নেতার জমা দেওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন সম্পর্কে আয়করের কাছে সবিস্তার তথ্য চায় সিবিআই। কিন্তু আয়কর দফতর তার কোনও সদুত্তর বা সেই তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ। আয়কর দফতরের একাংশের যুক্তি, তাদের প্রকল্পে সাড়া দিয়ে যে-ব্যক্তি হিসাব-বহির্ভূত টাকা সাদা করিয়েছেন, তাঁর স্বার্থ দেখাও আয়করের বিভাগেরই কাজ। এ ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির টাকার উৎস জানিয়ে দিলে আর কেউ আয়করের এই ধরনের প্রকল্পে সাড়া দেবেন না। তাতে আর্থিক ক্ষতি হবে সরকারেরই।
সিবিআইয়ের পাল্টা যুক্তি, সারদার মতো ঘটনায় বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তোলা টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, পরবর্তী কালে তাঁরা সেই টাকা আয়কর প্রকল্পের সুযোগে সাদা করিয়ে নিলে তাঁদের অপরাধ কি চাপা পড়ে যেতে পারে? কুণালবাবুও নিজের আবেদনে জানান, ওই নেতার বিপুল অঙ্কের ওই টাকার সঙ্গে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার যোগ রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।
এই নিয়ে কেন্দ্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ দফতর আয়কর এবং সিবিআইয়ের মধ্যে জোরদার দ্বৈরথের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল।