বাঁ দিক থেকে, কুণাল ঘোষ, শেখ সুফিয়ান এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
শেখ সুফিয়ানের সঙ্গে কি গোপন বৈঠক হয়েছিল বিজেপির কোনও শীর্ষস্থানীয় নেতার? এই নিয়ে নন্দীগ্রামে যখন চর্চা তুঙ্গে, তখন সুফিয়ানকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব কুণাল ঘোষ এবং শশী পাঁজা জানিয়ে দিলেন, গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে কোনও বৈঠক বা বোঝাপড়া হয়নি। তবে এ দিন সকালে নন্দীগ্রাম-সহ একাধিক জায়গায় প্রচারের সময়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পঞ্চায়েত ভোটের পরে তৃণমূলে ভাঙনেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুফিয়ান-বিজেপি বৈঠক নিয়ে মুখ না খুললেও শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বিরোধীদের ভোট দেওয়া মানে পরে তাঁরা তৃণমূলে চলে আসবেন। কিন্তু এ বার উলটপুরাণ হবে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট না পাওয়া ‘অভিমানী’ সুফিয়ানের সঙ্গে বিজেপির গোপন বোঝাপড়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরে তৃণমূল দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বুধবার নন্দীগ্রামের দলীয় কার্যালয়ে সুফিয়ান ও ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গকে নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও। পরে কুণাল বলেন, ‘‘দল ঐক্যবদ্ধ ভাবেই লড়ছে। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সুফিয়ান বৈঠক করেছেন বলে যে প্রচার হচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। সুফিয়ান যদি এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হন, তবে দল তাঁকে স্বাধীনতা দিচ্ছে।’’ সুফিয়ান জোড়েন, ‘‘কল্পিত জোটের কথা বলে আমাকে হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে। আইনি ব্যবস্থা নেব।’’
এই বৈঠকের আগেই সকালে নন্দীগ্রামের আমদাবাদে ভোট প্রচারে আসেন শুভেন্দু। সেখানে তৃণমূলকে নিশানা করে বিজেপি বিধায়কের বার্তা, ‘‘ওদের পার্টির (তৃণমূলের) কত লোক, আমদাবাদের এই অঞ্চল থেকে ব্লক, ব্লক থেকে জেলা পর্যন্ত সবাই আমাদের মতোই অশান্তিতে আছে। অতৃপ্ত আত্মা সব। উলটপুরাণ খুব শীঘ্রই শুরু হয়ে যাবে।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অন্য দলের, বিশেষ করে তৃণমূল ও তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের অনেকেই জিতে বিজেপিতে আসবেন বলে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন শুভেন্দু। এই ক্ষুব্ধদের দলে সুফিয়ানের অনুগামী বলে পরিচিত অনেকেই আছেন, যাঁরা নির্দল হিসাবে নির্বাচনে লড়ছেনও।
তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সুফিয়ানকে পাশে বসিয়ে ঐক্যের বার্তা দিলেও দলের নন্দীগ্রামের অনেক নেতা-কর্মী মনে করাচ্ছেন, এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না সুফিয়ানের বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইয়া। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা পীযূষের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ অসম্ভব বলে আগেই জানান সুফিয়ান। তাই কি অনুপস্থিতি? পীযূষের দাবি, ‘‘নির্বাচনের কাজে অন্যত্র ব্যস্ত ছিলাম।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কর্মীর দাবি, ‘‘শেষ কবে সুফিয়ানকে ব্লক অফিসে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছি না। অথচ এর আগেও বাপ্পাদিত্য ও পীযূষকে নিয়ে ব্লক কার্যালয়ে এবং সুফিয়ান-সহ অন্য নেতৃত্বকে নিয়ে সুফিয়ানের বাড়িতে ঐক্য বৈঠক করেছিলেন কুণাল ঘোষ।’’
সুফিয়ান অনুগামী বলে পরিচিত যাঁরা নির্দল হিসাবে লড়ছেন, তাঁরা তো প্রকাশ্যেই সরব। তৃণমূলের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য আব্বাস বেগ বলেন, ‘‘ভোটের দু’দিন আগে সুফিয়ানকে ব্লক অফিসে ডেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেও মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে না। ক’দিন আগেই দলের অফিসে তালা দিয়ে সুফিয়ান সম্পর্কে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে অপমান করা হয়েছে। এতেই মানুষের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।’’ সুফিয়ানের জায়গায় নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী সামসুল ইসলামেরও পাল্টা দাবি, ‘‘মানুষের কাছে সব পরিষ্কার। তারা উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকেই জেতাবে।’’