Kunal Ghosh Sovan Chatterjee

শোভন-বৈশাখীর ফ্ল্যাটে সৌজন্য সাক্ষাতে কুণাল, তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন? ঘরে ফেরার গান কি বাজছে?

একদা সম্পর্ক অম্ল থাকলেও ২০২২ সালের আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে মূলত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কথা হয়েছিল শোভন-কুণালের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৭
Share:

শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কুণালের।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে গেলেন তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের তরফে একে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই বর্ণনা করা হয়েছে। তবে পাশাপাশি এ-ও সত্য যে, দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন সাক্ষাৎ করেন, তখন তা আর নিছক ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ থাকে না। ফলে বৃহস্পতি সন্ধ্যার এই সাক্ষাৎ লোকসভা ভোটের আগে কোনও দিকে গড়াচ্ছে নাকি, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শোভন-কুণালের ওই সাক্ষাৎ নিয়ে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বরফ গলা আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার তা গলে পুরোপুরি জল হল।

বৈঠকের পর রাতে কুণাল বলেন, “শোভনদার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতপার্থক্য হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় ছিল। শোভনদা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উনি যদি রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় হন, তার থেকে ভাল কিছু আর হতে পারে না। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” পাশাপাশি কুণাল এও বলেন, “এই চা-চক্রটা অনেক দিন ধরেই পাওনা ছিল। একসঙ্গে বসে চা খাওয়াটা যে শেষ পর্যন্ত হতে পারল, তার কৃতিত্ব পুরোপুরি বৈশাখীর।” শোভন বলেন, “আমার বিজেপিতে যোগ দেওয়াটা হিমালয়ান ব্লান্ডার হয়েছিল। আমি তো মমতাদিরই লোক। দিদি যে দিন, যে ভাবে, যখন নির্দেশ দেবেন, আমি ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি।” শোভন আরও বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি-আদর্শেই নিজেকে তৈরি করেছেন। উনি এখন পরিণত রাজনীতিক।” অন্য দিকে বৈশাখী বলেন, “আমি সবসময় শোভনের সঙ্গে আছি। দিদির নির্দেশ আমার কাছে সবসময় শিরোধার্য।”

Advertisement

শোভন-কুণালের রাজনৈতিক বৈরিতা থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিকই ছিল। তবে একটা সময়ে দু’জনের ঠোকাঠুকি তুঙ্গে উঠেছিল। যখন কুণাল ঈষৎ পৃথুল চেহারার শোভনকে ‘গ্ল্যাক্সো বেবি’ বলে প্রকাশ্যেই কটাক্ষ করেছেন। আবার পাল্টা শোভন কুণালের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জেলখাটা আসামি’। শোভন এবং বৈশাখী বিজেপিতে যাওয়ার পরে রাজনৈতিক আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণ জারি থেকেছে। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পরেই শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে পদ্মশিবিরের সুতো ছিঁড়ে যায়। ভোটের আগে থেকেই অবশ্য উভয় পক্ষের বনিবনা হচ্ছিল না। বিধানসভা ভোটের পরে শোভন-বৈশাখী নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সাক্ষাতের পরে বৈশাখী বলেছিলেন, দেওয়ালটা ভেঙেছে।

তার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয়, ওই বছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে শোভন-বৈশাখী তৃণমূলে যোগ দেবেন। যদিও বাস্তবে তা হয়নি। জনশ্রুতি: ওই ‘প্রত্যাবর্তন’ হতে পারেনি মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে। এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কখনওই মেলেনি। তবে মমতার সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থেকেছে।

ঘটনাচক্রে, শোভন-কুণাল আবার কাছাকাছি আসেন ২০২২ সালে আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে। মূলত বৈশাখীর উদ্যোগে অনুষ্ঠানের পরে কথা হয় দু’জনের। ছবিও তোলা হয়। তার পর থেকেই ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থেকেছে কুণাল-শোভনের। ঘটনাচক্রে, কয়েক মাস আগে বৈশাখীর কন্যার জন্মদিনেও আমন্ত্রিত ছিলেন কুণাল। তিনি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন। আবার তার তিন দিনের মাথায় শোভনের বিধায়ক স্ত্রী (বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে) রত্না চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে সভাও করে এসেছিলেন। অর্থাৎ, কুণাল কখনও শোভন-রত্নার ব্যক্তিগত বিষয়ে ঢোকেননি। তবে শোভন এবং বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থেকেছে।

এর মধ্যেই আবার ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। শোভনের পাশাপাশি দিদির থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন বৈশাখীও। মমতা ব্যক্তিগত ভাবে শোভনকে অপছন্দ করেন না। তা ছাড়া, শোভন এখন বিজেপিতেও নেই। ফলে তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করতে কোনও ‘রাজনৈতিক সমস্যা’ নেই। শাসক শিবিরের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের আগে বৃহস্পতিবার কুণালের ‘সৌজন্য সাক্ষাতের’ পর সেই প্রক্রিয়া তরান্বিত হয় কি না সে দিকেই তাকিয়ে তৃণমূল শিবির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement