টেট উত্তীর্ণদের অবস্থান নিয়ে বিরোধীদের তোপ কুণাল ঘোষের। — নিজস্ব চিত্র।
টেট-উত্তীর্ণদের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও তাঁদের ধর্না চালিয়ে যেতে মদত দিচ্ছে বিরোধীরা। তারা ‘উস্কানি’ দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। এমনটাই অভিযোগ করলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। শুক্রবার রাতভর অবস্থানের পর শনিবারও ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেকের দফতরের সামনে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের তুলে দেয়। আটক করা হয় কয়েক জনকে।
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন চলাকালীনই তাঁদের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন অভিষেক। সেই মতোই শুক্রবার বিকেলে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে ওই বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা জানান, অভিষেক ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর ওই আলোচনায় ‘সন্তুষ্ট’।
কিন্তু সেই আলোচনা চলতে চলতেই অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে ক্যামাক স্ট্রিটে চলে আসেন টেট-উত্তীর্ণরা। তাঁদের বলা হয়, অভিষেক তাঁদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে দেখা করবেন। কিন্তু তাঁরা চলে যেতে রাজি হননি। অভিষেক অফিস ছেড়ে গেলেও তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যান। অবস্থান-বিক্ষোভের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন জন বিক্ষোভকারী। তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শুক্রবার সারা রাত অবস্থান-বিক্ষোভ করেন টেট-উত্তীর্ণরা। শনিবার পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। তার পরেই মুখ খোলেন কুণাল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিরোধীদের ধারণা, এই জট জিইয়ে রাখতে হবে। এই যন্ত্রণা রাখতে হবে। তার উপর দাঁড়িয়ে ওঁরা রাজনীতি করবেন।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেছেন। তিনি সাংসদ। বৈঠকে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রীও। আমি ছিলাম। আমি দলের প্রতিনিধি। অভিষেক মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে জট খোলার চেষ্টা করছেন। পরের বৈঠক ৮ অগস্ট শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। আর এঁরা (বিরোধীরা) রে রে করে উঠছেন!’’
কুণাল বলেন, ‘‘ওঁদের ভুল ভাবে প্ররোচিত করে ক্যামাক স্ট্রিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে জনভিত্তিহীন বিরোধীরা আন্দোলনটা হাইজ্যাক করতে চাইছে! অভিষেক কোন দোষটা করেছেন? উনি জট খোলার চেষ্টা করছেন। সেটাই বিরোধীদের গায়ে লাগছে! ভুল কিছু হয়েছে অবশ্যই। সেটা ইডি-সিবিআই দেখছে। তারা দেখুক। আমরা তো কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছি না!’’
বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, অভিষেক সরকারের অংশ নন। ফলে তাঁর ওই বৈঠক করার বা আশ্বাস দেওয়ার কোনও ‘অধিকার’ নেই। কুণালের ব্যাখ্যা, ‘‘জেপি নড্ডা সব রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বৈঠক করছেন বিজেপির অফিসে। উনি কে? সিপিএম জমানায় একের পর এক মিটিং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হয়েছে। মনমোহন সিংহের আমলে সিদ্ধান্ত নিত ১০ নম্বর জনপথ। আর এরা বড় বড় কথা বলছে?’’
কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘যাঁদের উপর দায়িত্ব ছিল, তাঁদের অনেকে দায়িত্ব পালন করেননি। সেটার তদন্ত চলছে। পাশাপাশি কর্মপ্রার্থীদের জটটাও খোলার চেষ্টা করতে হবে। অভিষেক সেই চেষ্টা করছেন। এই নিয়োগের প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। অভিষেক তা বোঝার চেষ্টা করছেন। তার পরেও দেখতে পাচ্ছি, ওঁরা বসে আছেন। কেন বসে আছেন?’’ আন্দোলনকারীদের কুণালের বার্তা, ‘‘ওঁদের অনুরোধ করব সরে যেতে। আপনাদের বক্তব্য স্মারকলিপি আকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিন। এটা নিশ্চিত ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেচনার মধ্যে রাখবেন।’’ ঘটনাচক্রে, বেলা ১২টা নাগাদ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।