প্রতীকী ছবি।
গ্রামের সব ক’টি পরিবারের পেট চলে দিনমজুরি করে। কিন্তু সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কোনও সুবিধা পাননি বাসিন্দারা। তাই তাঁদের বেআইনি খাদানে কয়লা কাটতে যেতে হয়, অভিযোগ পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির আলডিহির আকনবাগানের বাসিন্দাদের অনেকেরই।
গত রবিবার ওই গ্রামের তিন যুবক ‘অবৈধ’ এক খাদানে কয়লা কাটতে ঢুকে ভূগর্ভে আটকে পড়েন। বৃহস্পতিবার রাতে মেলে তিন জনের দেহ। এর পরেই গ্রামে সংবাদমাধ্যম পৌঁছলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আকনবাগানের মোট বাসিন্দা ৫২টি পরিবার। তাদের কারও বিপিএল কার্ড নেই। কেউ সরকারি প্রকল্পে দু’টাকা কিলো চাল, বার্ধক্যভাতা বা বিধবাভাতা পান না। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ মেলে না। নেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ডও। আকনবাগান গ্রামের মোড়ল সাগেন মারান্ডির দাবি, ‘‘সরকারি কোনও সহায়তা আমরা পাইনি। কেউ এ ব্যাপারে কখনও আমাদের কিছু জানানওনি।’’ কারণ জানতে চাওয়া হলে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠির বক্তব্য, ‘‘এমন পরিস্থিতির কথা জানা ছিল না। শীঘ্রই প্রশাসনের দল পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলার বাসিন্দা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের আশ্বাস, ‘‘কেন ওখানে কোনও সুবিধা পৌঁছয়নি, খোঁজ নেব।’’
আলডিহি এলাকায় বেশ কিছু বেআইনি কুয়ো-খাদান রয়েছে। ঝুড়ি-গাঁইতি নিয়ে প্রায় দিনই সেখানে কয়লা কাটতে দেখা যায় কিছু লোকজনকে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কয়লা বস্তায় ভরে সাইকেলে তা নির্দিষ্ট কিছু ‘ডিপো’য় পৌঁছে দেন ওই শ্রমিকেরা। বস্তা পিছু ৮০ টাকা মেলে। একটি সাইকেলে সর্বোচ্চ ন’টি বস্তা নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দিনে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে রোজগার হয়।
খনি এলাকার আর্থ-সামাজিক বিষয়ের গবেষক তথা আসানসোলের বিসি কলেজের অধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘শ্রম বিক্রির অন্য কোনও উপায় না পেয়ে স্রেফ পেটের টানে ঝুঁকিবহুল এই কাজে যান অনেকে।’’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘শাসকদল থেকে প্রশাসন, কেউ খোঁজ রাখেন না ওই এলাকার।’’
কেন ওই গ্রামে কোনও প্রকল্প পৌঁছয়নি, সরাসরি জবাব দেননি কোনও কর্তাই। আসানসোলের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই এলাকার কাউন্সিলর নেপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করব।’’ তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ওখানকার গরিব মানুষকে পুরসভার অস্থায়ী কাজে সুযোগের ব্যবস্থা করব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ওই এলাকায় সামাজিক প্রকল্পের প্রচার হয়েছিল। বাসিন্দারা উদ্যোগী হননি। যদিও মোড়ল তা মানেননি।
এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকের আর্জি, ‘‘ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ কাজে না গিয়ে একশো দিনের কাজের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’