কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভার ভোটে পর পর দু’বার বিজেপির কাছে হেরেছেন। পুরভোটে সেই বিজেপি-কেই দাপটে উড়িয়ে দিয়ে ইংরেজবাজার পুরসভায় তৃণমূলকে জিতিয়ে আনলেন মালদহের দাপুটে তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। এখন প্রশ্ন, তিনিই কি ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান হবেন? সেই সিদ্ধান্তের ভার অবশ্য ‘অনুগত সৈনিক’-এর মতো কৃষ্ণেন্দু দিয়েছেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘ইংরেজবাজারের জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই পুরসভাকে এর পর কর্পোরেশন (পুরনিগম) করা উচিত।’’
ইংরেজবাজারের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু। সেই ওয়ার্ডে তিনি নিজে জিতেছেন তো বটেই, পাশাপাশি ইংরেজবাজারের ২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতেই এগিয়ে রয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্ত্রী কাকলি চৌধুরী, ৮ নম্বরে ঘনিষ্ঠ অনুগামী পলি নস্কর, এমনকি কৃষ্ণেন্দুর পুত্রসম বলে পরিচিত প্রসেনজিৎ দাসের মা তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন ইংরেজবাজারের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনিও জয় নিশ্চিত করেছেন।
অথচ পুরভোটে তৃণমূলের প্রথম প্রার্থিতালিকায় এঁদের অনেকের নামও ছিল না। পরে সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সই-করা প্রার্থিতালিকায় কৃষ্ণেন্দু এবং তাঁর অনুগামীদের অনেকের নাম দেখা যায়। বুধবার মালদহের ইংলিশবাজার পুরসভায় জয়ী হওয়ার পর কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন, এই জয় আসলে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়।
কৃষ্ণেন্দু তৃণমূলের পুরনো কর্মী। দলের জন্মলগ্ন থেকেই মমতার সঙ্গে রয়েছেন। এক সময় রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূলের নেতৃত্বে সরকারে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বাগিচা ও উদ্যানপালনমন্ত্রী ছিলেন কৃষ্ণেন্দু। পরে তাঁকে মন্ত্রিসভায় পর্যটনমন্ত্রীও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ২০১৫ সালে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান হলেও ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে হেরে যান। বস্তুত, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়াঝড়ে ইংরেজবাজারে বেহাল হয়েছিল তৃণমূল। রাজ্যের বেশিরভাগ বিধানসভা কেন্দ্রে যেখানে তৃণমূলের আধিপত্য বিস্তার হয়েছিল, সেখানে ইংরেজবাজারের ২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতেই তৃণমূলের থেকে এগিয়েছিল বিজেপি। কিছুটা ‘সম্মানহানি’ হয়েছিল কৃষ্ণেন্দুরও। ২০২২-এর পুরসভা ভোট তাই কৃষ্ণেন্দুর কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দেখা গেল কৃষ্ণেন্দু শেষ পর্যন্ত শুধু উতরে যাননি, পরীক্ষায় ‘লেটার মার্কস’ পেয়েছেন। ২০২১-এর ভোটের স্কোরকার্ড পুরোপুরি উল্টে দিয়েছেন তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
তবে কি আবার তিনিই ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান হচ্ছেন? প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণেন্দু বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কোনও বক্তব্য নেই। দল যদি মনে করে, তবে তা-ই হবে। কারণ, তিনি মনে করেন, মানুষ তাঁকে নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভোটটা দিয়েছেন।’’