State News

প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র নিজেকেই! বিপাকে সুপার

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সুপার কোনও সাহায্য ছাড়াই প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৭
Share:

নিজেই নিজেকে শংসাপত্র দিয়েছেন সুপার।

নিজের নেতৃত্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ডে অন্যতম আবেদনকারী তিনি নিজেই! এবং নিজেকে ৫৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করে শংসাপত্রও দিয়েছেন!

Advertisement

এখানেই শেষ নয়, নদিয়া জেলার প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার স্ত্রীকেও ওই এক মেডিক্যাল বোর্ড থেকে ৫৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী হিসেবে শংসাপত্র দিয়েছেন!

এমন ঘটনার কথা স্বাস্থ্যভবন জানতে পেরেছে ঠিক এক বছর পরে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। গত সপ্তাহে তদন্তকারী দল নদিয়ায় গিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে এসেছে। শংসাপত্র দেখে তারা ‘চমকিত’। কারণ, সেখানে সুপার নিজের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসাবে লিখেছেন ‘আই এইচ ডি’ অর্থাৎ, ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ। যে অসুখে প্রতিবন্ধীর সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না।

Advertisement

আরও পড়ুন: যাদবপুরে ঐশীর সভায় আপত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের

স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সুপার কোনও সাহায্য ছাড়াই প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করছেন। স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। কোন অর্থে তিনি ‘প্রতিবন্ধী’, সেই বিষয়েও স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে জবাবদিহি করতে বলেছে।

মহকুমা, জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দেওয়ার জন্য আলাদা মেডিক্যাল বোর্ড থাকে। তার চেয়ারম্যান হাসপাতালের প্রধান। তাঁর নিজের শংসাপত্র প্রয়োজন হলে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার (সিএমওএইচ) কাছে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। কেন?

শচীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, ‘‘আমার নিয়ম জানা ছিল না। না জেনে ভুল করে ফেলেছি। অজ্ঞতা থেকেই তো ভুল হয়। সিএমওএইচের কাছে গেলেই সব মিটে যেত।’’ কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে, এত দিন ধরে মেডিক্যাল বোর্ডের দায়িত্ব সামলানোর পর এই অজ্ঞতা? তা ছাড়া, যে বোর্ডে তিনি চেয়ারম্যান, সেই বোর্ডে নিজের

বা স্ত্রী-র শংসাপত্র দেওয়া যায় না, এ তো সকলেরই জানা। সুপারের উত্তর, ‘‘ভুল করেছি। দফতর যা সাজা দেবে মেনে নেব।’’রাজ্যের স্বাস্থ্যঅধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থেকে আইন না-জানা কোনও যুক্তি নয়। ঘটনার সত্যাসত্য জানতে তদন্ত হচ্ছে।’’

সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শংসাপত্রে রয়েছে, তিনি ‘অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড।’ তাঁর প্রতিবন্ধকতা ঠিক কী রকম? উত্তর, ‘‘আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তার ফলে দুর্বলতা আছে। হাঁটতে-চলতে বুকে টান ধরে।’’ কিন্তু এটা তো অসুস্থতা। তিনি কোন দিক দিয়ে ৫৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী? উত্তর আসে, ‘‘আমার হার্টের রোগ আছে। এটাকেই বোর্ডের সদস্যেরা প্রতিবন্ধকতা হিসাবে মেনেছেন। আর আমার স্ত্রী-র মানসিক সমস্যা রয়েছে। তা-ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে।’’

রাজ্যের কমিশনার (প্রতিবন্ধকতা) দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় জানান, ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র থাকলে বিশেষ বৃত্তি দেওয়া হয়। বেকারেরা সরকারের থেকে ঋণ পেতে পারেন, পুনর্বাসন অনুদান পাওয়া যায় ১০ হাজার টাকার। পেনশন মাসে ১ হাজার টাকা করে। চাকরিতে ৪ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা মেলে, সরকারি বাস-ট্রামে টিকিট লাগে না। ট্রেনের টিকিটে ৫০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মেলে। এই সব কারণে এই শংসাপত্র ঘিরে দুর্নীতি অতীতেও হয়েছে। যদিও শচীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘আমি এখনও এই সব সুবিধা নিইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement