বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, একের পর এক পার্টি এবং জমিয়ে সাজগোজ। জাঁকিয়ে শীতই হোক বা আলতো ঠান্ডা এ সমীকরণ বদলায় কার সাধ্য!
আর সেখানেই হাজির ছোট্ট একটা সমস্যা। পার্টিওয়্যার প্রচুর আছে বটে, কিন্তু মানানসই শীতপোশাকও তো চাই। লং কোট, ফারের জ্যাকেট আর ক’টাই বা থাকে বাড়িতে! এ দিকে, একই পার্টি লুকে বারবার দেখা গেলে বন্ধু মহলে হাসির খোরাক হওয়ার আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মুশকিল আসান মিক্স-অ্যান্ড-ম্যাচ। ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল যেমন বলছেন, “ফ্যাশনেবল লং কোট বা সোয়েটার না হয় একটাই। ঘুরিয়েফিরিয়ে মেক-আপ করে, চুলের কায়দা বদলে, অ্যাক্সেসরি বদলেই কিন্তু প্রতিবার নতুন লুক তৈরি করে ফেলা যায়। ধরা যাক, একটা কালো লং কোট রয়েছে। সঙ্গে এক দিন একটা ঝলমলে গাউন পরলেন, চুলে সফ্ট কার্ল, সঙ্গে ওয়েজ হিলের জুতো, গলায় কুন্দন বা পোলকির গয়না। বেশ একটা ফিউশন লুক হবে। আর একটা পার্টিতে ওই কোটটাই পরলেন সিল্কের শাড়ির সঙ্গে, শাড়ির আঁচলটা গলায় জড়িয়ে নিলেন। চুলে থাকল টপ নট, পায়ে স্টিলেটো। অথবা হাঁটুঝুলের ড্রেসের সঙ্গে কোট-এর যুগলবন্দিতে সঙ্গী হল বুট। চুলে থাকল সাইড ব্রেইড বা এলো খোঁপা। ট্রাউর্জাস বা সিকুইনড লেগিংসের সঙ্গে ওই কোটটাই পরে একটা উজ্জ্বল স্কার্ফ জড়ালেও ফের বদলে যাবে লুক।” অর্থাৎ সেই একই সোয়েটার বা কোটেই লাগাতার আপনিই পার্টির ‘হট প্রপার্টি’।
একই শীত-পোশাক বারবার পরা নৈব নৈব চ? বেশ তো! এত দোকান-বুটিক, অনলাইন শপিংয়ের এত সাইট রয়েছে কী করতে! শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, ফুটপাথ থেকে শপিং মল, বিপণি থেকে বুটিক কিংবা অনলাইন স্টোর সর্বত্রই হরেক রং, ডিজাইন ও ঝুলের সোয়েটার, জ্যাকেট, কোট, জাম্পার, উইন্টার টপের ছড়াছড়ি। সোয়েটারে পোলো নেক বা বোট নেক এবং স্ট্রাইপেরই কদর বেশি। আর রঙের ক্ষেত্রে বরাবরের হিট বিভিন্ন উজ্জ্বল শেড। চাহিদা রয়েছে নানা ধরনের স্টোল, স্কার্টেরও। আইসিসিআরে ক্রাফট্স কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার বিপণি ‘কমলা’য় যেমন কুলু, কাশ্মীরি শালের পাশাপাশি মিলছে স্কার্ট এবং কলমকারির জ্যাকেট। বালিগঞ্জের উইভার্স স্টুডিওয় রয়েছে নানা ধরনের স্টোল এবং গরম কুর্তি। স্টোল ও স্কার্ফ আছে ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের বুটিক ‘বহ্নিশিখা’তেও। রয়েছে শীত-পার্টির উপযোগী টাই অ্যান্ড ডাই, শিবোরির কাজে মটকা সিল্কের শাড়ি, দু’রঙা বেঙ্গালুরু সিল্কও।
পার্টিতে যাঁরা একেবারে ফ্যাশন-ট্রেন্ড মেনে সাজতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য ডিজাইনার ঋতু কুমারের অটাম-উইন্টার কালেকশনে নানা ধরনের টেলার্ড জ্যাকেট, ট্রাউজার্স, টিউনিক এবং স্কার্ট। ভিনদেশি ফ্যাশনের আরও নানা ধরনের পোশাক মিলছে বিভিন্ন শপিং মলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড স্টোরগুলোতেও।
রাত-পার্টি মানেই খোলামেলা পোশাকের ঝুলে-কাটছাঁটে ইচ্ছেমতো সাহসী হওয়া। কিন্তু হিমঝরা সন্ধ্যায় সে সাহস না দেখানোটাই মঙ্গলের বলে মনে করেন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। বললেন, “শর্ট ড্রেস নিশ্চয়ই পরুন। কিন্তু সঙ্গে থাক একটা ডিজাইনার স্টকিংস এবং জ্যাকেট। ঠান্ডায় পার্টি করলে শীতপোশাকটাও তো মাস্ট। পাতিয়ালা বা লং স্কার্টের সঙ্গে জোধপুরী জ্যাকেট, ব্লেজার বা ওয়েস্ট কোট পরতে পারেন। ট্রেঞ্চ কোট বা লেদার জ্যাকেট পরলেও বেশ কেতাদুরস্ত দেখায়। কিংবা টপের বদলে পোলো নেক বা ডিপ নেকের লং সোয়েটার। তবে যা-ই পরুন, কালার কম্বিনেশনে থাক কমলা, রানি, হলুদ, অলিভ গ্রিন, ম্যাজেন্টা, বেগুনির মতো ঝলমলে রং। এবং সাজের সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরি, মানে একটা ফ্যাশনেবল ঘড়ি, ব্যাগ, জুতো, রংচঙে স্কার্ফ। আর গয়না বলতে গলাতেই, কানে ছোট স্টাড বা বড় রিং পরলেই মানাবে ভাল।”
তা হলে? পার্টির মরসুম তো হাজির শীত-শহরে। আপনার সাজ কী বলছে?