সাউথ সিটিতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে জমাটি আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল তৃণার। দীর্ঘক্ষণ ঠায় দাঁড়ানোর পরে একসঙ্গে কয়েকটি এসএমএস। দেখে, আড্ডা দেওয়ার প্ল্যান বাতিল করে বন্ধুরা ততক্ষণে চলে গিয়েছে সদ্য রিলিজ হওয়া একটি সিনেমা দেখতে। বন্ধুকে ফোন করে তৃণা জানতে পারে, দু’ঘণ্টা আগেই এসএমএসগুলি পাঠানো হয়েছিল তাকে। দেরিতে এসএমএস পাওয়ায় না হল আড্ডা, না হল সিনেমা দেখা।
জ্বরের জন্য কলেজে গিয়ে বা সাইবার কাফেতে পরীক্ষার ফল দেখতে যেতে পারেননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পার্ট ২-র এক ছাত্রী। কলেজে এক বান্ধবীকে ফোন করে জানতে পারেন, মোটেই ভাল নম্বর পাননি। চিন্তায় বাড়িতে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। ফোনে কথা বলার কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই বান্ধবীরই পাঠানো এসএমএস প্রায় ৬ ঘণ্টা পর পৌঁছয় ওই ছাত্রীর মোবাইলে। তাতে লেখা, “দেখতে ভুল করেছিলাম। ভাল নম্বরই এসেছে।”
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এ ভাবেই দেরিতে এসএমএস আসা-যাওয়ার ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কলকাতার মানুষকে। বিশেষত এয়ারটেল, ভোডাফোনের মতো বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেই সমস্যা বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এসএমএস গন্তব্যে পৌছতে লেগে যাচ্ছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি দরকারের সময়ে বিপদেও পড়তে হচ্ছে বহু গ্রাহককে।
তবে, সরকারি মোবাইল অপারেটিং সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর দফতরে এখনও এসএমএস সংক্রান্ত এমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংস্থার এক আধিকারিক বিশ্বজিত্ পাল। তিনি জানান, সাধারণত যাঁকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে, কোনও কারণে তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকলে বা পরিষেবা ক্ষেত্রের বাইরে থাকলে দেরিতে এসএমএস যাওয়ার সমস্যা হয়। যে সার্ভারের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া হয়, তাতে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। ওই আধিকারিকের কথায়, “প্রত্যেকটি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা পৃথক সার্ভার ব্যবহার করে। তাই একাধিক অপারেটরের একসঙ্গে এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
কী বলছে বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি? গত এক মাস যাবত্ চলা এই সমস্যার কথা স্বীকার করে সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়েছে, প্রযুক্তিগত কিছু গোলযোগেই একাধিক অপারেটরের গ্রাহকদের একই সমস্যা হচ্ছে। তবে ওই বেসরকারি অপারেটরদের সংগঠন সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই)-এর সদস্যেরা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বারবার ফোন বা এসএমএস করেও কোনও জবাব মেলেনি।