মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শৌভিক বন্দ্যোপাধায়। বুধবার রাতে কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা তাঁকে নবদ্বীপ থেকে ধরে।
অভিযোগ, নিজেকে অভিষেক বলে পরিচয় দিয়ে ওই যুবক ফেল করা এক ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।
মে মাস থেকে চলছিল এই কাণ্ড। উপাচার্যের পাশাপাশি রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরীর কাছেও আসে ফোন। এর পরে দিন দুয়েক আগে লালবাজারে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। অভিষেকবাবুও জানান, তিনি ওই যুবককে চেনেন না। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই সাংসদও।
সুরঞ্জনবাবু আপাতত দিল্লিতে। বৃহস্পতিবার তিনি সেখান থেকে টেলিফোনে বলেন, “এক পরীক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে মে মাস থেকে ফোন পাচ্ছিলাম। যিনি ফোন করেন, তিনি নিজেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে পরিচয় দেন।” যাঁকে পাশ করানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল, সেই ছাত্রের খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু চলতি সপ্তাহের গোড়ায় ওই ব্যক্তি টেলিফোন করে রীতিমতো চোটপাট শুরু করেন বলে অভিযোগ। সুরঞ্জনবাবুর কথায়, “আমাকে বলা হয়, কেন এত দেরি হচ্ছে! উপাচার্য হিসেবে এর দায় আপনার!” এ সব শুনে সুরঞ্জনবাবুর সন্দেহ হয়। তিনি সংসদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে অভিষেকবাবুর টেলিফোন নম্বর বার করেন। উপাচার্যের কথায়, “দেখা যায়, যে নম্বর থেকে ফোন আসছিল, সেটির সঙ্গে অভিষেকবাবুর নম্বরের ফারাক আছে।” এর পরে অভিষেকবাবুকে টেলিফোন করে বিষয়টি জানান উপাচার্য।
সুরঞ্জনবাবু বলেন, “ঘটনার কথা শুনে অভিষেকবাবু অবাক হয়ে যান। তিনি জানান, এ সবের কিছুই তাঁর জানা নেই। বিষয়টি পুলিশে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।” তার পরেই রেজিস্ট্রার এবং উপাচার্য পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
সুরঞ্জনবাবু জানান, ২০০২ থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং তার পরে উপাচার্য হিসেবে আছেন। এর মধ্যে তাঁর কাছে কেউ এমন আবেদন জানাননি। তিনি বলেন, “কেউ যদি মূল্যায়ন নিয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ জানান, তা হলে ছাত্র স্বার্থে যত দূর সম্ভব সাহায্য করা হয়।
কিন্তু টেলিফোনে এমন আবেদন এর আগে কেউ জানাননি।” বিষয়টি তাই প্রথমে ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি বলে জানান সুরঞ্জনবাবু। তবে তাঁর কথায়, “মে মাসেই অভিষেকবাবুর নম্বরটি খুঁজে বার করা উচিত ছিল। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য ভবিষ্যতে সাবধান থাকব।”
পুলিশ সূত্রে খবর, উপাচার্যের কাছে আসা ফোনের সূত্র ধরেই অভিযুক্ত যুবক শৌভিকের খোঁজ মেলে। সেই মতো তাঁর মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখে বুধবার রাতে নবদ্বীপে হানা দেয় পুলিশ। পাকড়াও করা হয় শৌভিককে। উদ্ধার হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন এবং সিম কার্ড। যে ছাত্রকে পাশ করানোর জন্য শৌভিক হুমকি দিতেন, এই ঘটনায় সেই ছাত্রটিও জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।