লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কলকাতায় গাড়ি পার্কিংয়ে চালু হয়েছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রব্যবস্থা। উদ্দেশ্য, দূর্নীতি রুখে স্বচ্ছতা আনা। কিন্তু সূত্রের খবর, নয়া ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। পুরসভার তরফে দাবি, বিভিন্ন পার্কিং লটে
মাসুল আদায়কারীদের অনীহাই এর মূল কারণ।
শহরের কোথায় পার্কিং হবে সে বিষয়ে পুলিশের অনুমতি নিয়ে টেন্ডার ডাকে পুরসভা। তার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে এই খাতে পুরসভার আয় হয়েছিল ৬.৫৭ কোটি টাকা। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৪২ কোটি টাকা। বহু দিন ধরে অভিযোগ উঠছিল পার্কিংয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় গাড়ি রাখা হয়েছে, এই অভিযোগে আদায়কারীরা গাড়িমালিকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছিল, রসিদ না কেটে আদায়কারীদের একাংশ টাকা আত্মসাৎ করছেন। এ সব অনিয়ম রুখতে গত সেপ্টেম্বর থেকে পুরসভা চালু করে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।
শহরে মোট ৭৮টি এজেন্সিকে পার্কিংয়ের মাসুল আদায়ের লাইসেন্স দিয়েছে পুরসভা। এর মধ্যে ৪২টি সমবায় সমিতি। আগেভাগেই প্রতিটি সংস্থা বা সমিতিকে পুরসভার কাছ থেকে যন্ত্র কেনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক একটি যন্ত্রের দাম ৮ হাজার টাকা। কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৫০ যন্ত্র। বিভিন্ন সংস্থা বা সমিতির মোট আদায়কারী এক হাজারের উপর। অর্থাৎ, বাধ্যতামূলক হলেও এই যন্ত্র কেনার ব্যাপারে আগ্রহ যথেষ্ট নয়।
কী রকম কাজ হচ্ছে নয়া যন্ত্র-ব্যবস্থায়, তা দেখতে সম্প্রতি পুর-অফিসারেরা কিছু সমীক্ষা করেছেন। দেখা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে হাতে যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও পার্কিং আদায়কারীরা সেটি ব্যবহার করছেন না। কেন যন্ত্র ব্যবহার করেননি, তা জানতে চেয়ে পুরভবনের সামনেই আদায়কারীর কাছে ক়টু মন্তব্য শুনতে হয়েছে খোদ পার্কিং বিভাগের প্রধান সৌমেন মল্লিককে। চালককে দেখিয়ে আদায়কারী ওই অফিসারকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা আমার আর ওঁর ব্যাপার। আপনি কেন নাক
গলাতে এসেছেন?’’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে চাননি সৌমেনবাবু। তবে, বিভাগের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘বাড়তি আদায়ের চেষ্টায় অধিকাংশ আদায়কারী যন্ত্র ব্যবহার করতে চান না। যাঁরা গাড়ি রাখেন, তাঁরাও যন্ত্রের রসিদ দাবি করেন না।’’
এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘শহরের বিভিন্ন মোড়ে অন্তত একশো হোর্ডিংয়ে আমরা এ নিয়ে প্রচার করেছি। হোর্ডিংগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করলে বহু অর্থ আসত পুরসভার। আর কী করতে পারি?’’ আর আইনি ব্যবস্থা? ‘‘আমরা পুলিশকে বলেছি, ওই যন্ত্র ছাড়া যাঁরা পার্কিংয়ে মাসুল আদায় করছেন, তাঁদের গ্রেফতার করতে।’’ লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘পার্কিং আদায় কোথায়, কী ভাবে হচ্ছে, তা দেখার বিন্দুমাত্র অবকাশ আমাদের নেই। শহরের রাস্তাঘাটের যা হাল, যান নিয়ন্ত্রণেই পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে হয়।’’
কী বলছেন মাসুল আদায়কারীরা?
এসপ্ল্যানেডে আয়কর ভবনের সামনে পার্কিংয়ের মাসুল আদায়ের দায়িত্ব একটি সমবায় সমিতির। এর অন্যতম অংশীদার দিল মহম্মদের বক্তব্য, ‘‘যন্ত্র ব্যবহার না করার অভিযোগটি ঠিক নয়। তবে, প্রতিটি যন্ত্রে প্রতিটি গাড়ির তথ্য মজুত করা এবং গাড়িওয়ালাকে অন্তিম রসিদ দিতে যে সময় লাগে, তাতে চালক অস্থির হয়ে পড়েন। আমরা অন্য গাড়ির উপর নজর রাখতে পারি না। তাই সমস্যা হচ্ছে।’’ দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দেখুন, চালকের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে আমরা যদি কিছু
বাড়তি আয় করতে পারি, তা হলে অসুবিধা কোথায়?’’
পুরসভার পার্কিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সমস্যা কিছু আছে। বিভাগের কর্মী-অফিসারেরা পরিস্থিতি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’’