বেহাল রাস্তা দিয়েই চলছে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।
খাস কলকাতায় এমন ‘প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ’ এল কোত্থেকে? রাজপথের ধারের ফটক পেরিয়ে ঢুকতে গিয়ে একটু হলেই হোঁচট খাচ্ছিলেন সাংহাইয়ের ইয়াং লিং। পিচরাস্তা পাল্টে গিয়েছে এবড়োখেবড়ো জমিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভিটে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আপনি স্বাগত! ওই রাস্তায় নিকাশি লাইনের সংস্কারের পরে গত দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এটাই রবীন্দ্রপ্রেমিকদের তীর্থস্থানের চালচিত্র।
পর্যটকদের এই হালের খবর অবশ্য এত দিন পৌঁছয়নি পর্যটন দফতরের উঁচুতলায়। পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু সব শুনে বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” নিকাশি সংস্কার বা রাস্তা সারাই যাঁদের দায়িত্ব, সেই কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রবীন্দ্র সরণি তথা সাবেক চিৎপুর রোডের দিক দিয়ে ঢুকে চিলতে রাস্তাটির নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর স্ট্রিট। ছাল-চামড়া উঠেছে সেই রাস্তার। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বিশাল ফটক পেরিয়ে এক কদম এগোতেই তাল-তাল মাটি। হোঁচট খাওয়া কোনও মতে এড়িয়ে পা টিপে-টিপেই এগোতে হচ্ছে। দোসর ডাঁই করা জঞ্জাল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল পূর্ব লন্ডন থেকে আসা ক্লাইভ ও অ্যান্ড্রুজ, বিলেতবাসী ডাক্তার অরুণ রায় থেকে শুরু করে রানাঘাটের খগেন্দ্রনাথ অধিকারী সকলের অবস্থাই তথৈবচ।
পুরসভার দাবি, মাটির নীচে নিকাশি-লাইনে সংস্কার চলছে। নিকাশি বিভাগের আধিকারিক অমিতকুমার রায় বলেন, “পাইপ বসানো ও রাস্তা সারাইয়ের মধ্যে অন্তত দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া দরকার। না হলে রাস্তা বসে যেতে পারে।”
পুরসভার এই যুক্তিকে আমল দিতে নারাজ প্রযুক্তিবিদরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নিকাশির পাইপ বসানোর ২-৩ দিনের মধ্যেই রাস্তা সারানোয় সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রে পাইপের আশপাশ এলাকায় বালি ও জল মিশিয়ে ভাল করে ঠাসিয়ে দিতে হবে।” পুরসভার নগর পরিকল্পনা দফতরের প্রাক্তন ডিজি দীপঙ্কর সিংহও বলেন, “নিকাশি পাইপ বসানোর অজুহাত দিয়ে রাস্তা সারানোয় দেরির কথা অযৌক্তিক। পাইপ বসানোর পর ফাঁকা অংশ ভরাট করতে ভাল করে বালি-জল মিশিয়ে ২-৩ দিনের মধ্যেই পিচ ঢালা যায়।”
বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। তিনি নিজেই মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ক’দিন আগে ওই তল্লাটে একটি আর্ট গ্যালারি উদ্বোধন করতে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। দেশ-বিদেশের সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি ভিআইপি বা বিশিষ্টদের আনাগোনা লেগেই থাকে। ট্যুর গাইড ভারতী নাগের কথায়, “দু’সপ্তাহ ধরে পর্যটকদের নিয়ে আসছি। কাজ খুব ধীরগতিতে চলছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যটনকেন্দ্রের সামনে দ্রুত রাস্তা সারাতে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।” জোড়াসােঁকা ঠাকুরবাড়ির কেয়ারটেকার সনৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থান-মাহাত্ম্যের কথা ভেবেই পুরসভার কাছে আর একটু গুরুত্ব প্রাপ্য ছিল জোড়াসাঁকোর।”
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বিধায়ক স্মিতা বক্সী বলেন, “নিকাশির কাজ শেষ হয়েছে। জোড়াসাঁকোয় ঢোকার রাস্তার পুরোটাই নতুন করে সারানো হবে।” মেয়র পারিষদ (ইঞ্জিনিয়ারিং) অতীন ঘোষ বলেন, “রাস্তাটি যাতে দিন তিনেকের মধ্যে সারিয়ে ফেলা যায়, সে ব্যাপারে আমিও খোঁজখবর করছি।”