লোকসভা ভোটের রেশ কাটতেই শহরের নাগরিক পরিষেবা বাড়ানোর কাজে জোর দিল কলকাতা পুর-প্রশাসন। সামনের বছর কলকাতা পুরসভার ভোট। তার আগেই শহরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে মঙ্গলবার কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছে তৃণমূল-শাসিত পুরবোর্ড। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বছরের মধ্যেই শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে খোলা ভ্যাট তুলে দেওয়া হবে। অর্থাৎ রাস্তার উপরে আর কোনও জঞ্জাল পড়ে থাকবে না।
এ দিন পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের প্রতিটি এলাকায় কম্প্যাক্টর মেশিন বসানো হবে। তাতে যে সব জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ জমে থাকে, তা আর থাকবে না। নাগরিক পরিষেবা বাড়াতে জঞ্জালের পাশাপাশি নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো মজবুত করতেও এ দিন কিছু প্রকল্প নিয়েছে পুর-প্রশাসন।
কলকাতা শহরের যত্রতত্র জঞ্জাল পড়ে থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছেন পুর-প্রশাসনকে। তার পরেই শহরের জঞ্জাল অপসারণের কাজে কড়া নজর দেয় পুরসভা। সংশ্লিষ্ট দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার নিজেও নিয়মিত শহরের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালান। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ পুর কমিশনার খলিল আহমেদও সেই কাজের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। তার পরেই জঞ্জাল অপসারণের কাজে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। শুরু হয় কম্প্যাক্টর মেশিন বসানোর কাজ। জঞ্জাল সরাসরি ওই যন্ত্রে ফেলা হলে তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে পেষাই হয়ে যায়। ফলে রাস্তায় জঞ্জাল জমে না। পরিবেশও সুস্থ থাকে।
মেয়র পারিষদ দেবব্রতবাবু জানান, বর্তমানে শহরে ৬টি এলাকায় কম্প্যাক্টর স্টেশন হয়েছে। সেগুলি রয়েছে লেক মার্কেট, চারু মার্কেট, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, টালা পার্ক, সামসুল হুদা রোড ও গোবিন্দ আড্ডি রোডে। আগামী মাসে ওই ধরনের আরও তিনটি স্টেশন হবে। পাশাপাশি এই মুহূর্তে কলকাতায় ১৫টি চলমান কম্প্যাক্টর মেশিন কাজ করছে। জুন মাসে আরও ৭টি কাজ করবে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, এ বছরেই শহরে আরও ৭৮টি কম্প্যাক্টর স্টেশন হবে। আর ৩৯টি চলমান কম্প্যাক্টর কেনা হচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই সবক’টি যন্ত্র চলে আসবে। সবগুলি কাজে লেগে গেলে শহরে আর কোথাও খোলা অবস্থায় জঞ্জাল দেখা যাবে না।
একই সঙ্গে শহরের নিকাশি পরিকাঠামো আরও ঢেলে সাজবে পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, মহানগরীর নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যেই মাটির নীচে গ্লাস রিইনফোর্সমেন্ট পলিমার (জিআরপি) লাইনার বসানোর কাজ হয়েছে।
পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, দীর্ঘকাল ধরে মাটির নীচে ইটের কাঠামোর ভিতর দিয়ে শহরের নিকাশি জল বয়ে যেত। দীর্ঘদিন আগের তৈরি ওই কাঠামো অনেক জায়গাতেই ভেঙেচুরে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেই ইটের কাঠামোর বদলে জিআরপি লাইনার বসানোর পরিকল্পনা নেয় পুর প্রশাসন। এ দিন পুরকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরও বেশি এলাকা জুড়ে জিআরপি লাইনার বসানো হবে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে সেই কাজ যাতে শেষ করা যায়, তা-ও দেখবে পুর-প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে জিআরপি লাইনার বসাতে গিয়ে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় পুর-প্রশাসনকে। ওই কাজের বরাত পেয়েছিলেন যে বিদেশি সংস্থা, তাঁরা দেউলিয়া হওয়ায় কাজটি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে জোর বিতর্ক চলে পুরসভায়। ভোটের আগেই নতুন করে টেন্ডার ডেকে বাকি কাজের বরাত দেওয়া হয় অন্য একটি সংস্থাকে। সেই সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজও শুরু করে করে দিয়েছে। এ দিন মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যে ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে, তা কঠোর ভাবে মেনে চলা হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন নিকাশি দফতরের দায়িত্ব ছিল মেয়র পারিষদ রাজীব দেবের উপর। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তাঁর পরিবর্তে মেয়র নিজেই ওই দফতরের কাজ দেখবেন বলে ওই সূত্রে জানানো হয়েছে। যদিও এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজীববাবু।