সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে শব্দ-তাণ্ডবের প্রতিবাদ করে বাচিক শিল্পী দম্পতির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করল দমদম থানার পুলিশ। এ নিয়ে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ। বুধবার ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার হয়েছিল রবীন সিংহ, পঙ্কজ সিংহ, আদেশ সাউ। রাতে ধরা হয়েছে গৌতম প্রামাণিক ও রাজকুমার ওরফে সনু সাউকে। শুক্রবার ব্যারাকপুর কোর্টে ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। তবে ‘আসল’ অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে আক্রান্ত পরিবারই।
আক্রান্ত প্রবীণ বাচিক শিল্পী দম্পতি পার্থ ও গৌরী ঘোষের ছেলে অয়ন ঘোষ এ দিন বলেন, “‘লম্বা চুলের একটি ছেলে আমাদের বাড়ির রেলিং বেয়ে উঠে এসেছিল ইট হাতে। আর এক যুবক অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিল, আমাকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল ও ইট মারছিল। শুনেছি, গ্রেফতার হওয়া যুবকদের মধ্যে ওই দু’জন নেই।’’ তাঁর দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে এখনও কয়েক জন অধরা।
দমদমের বরফকল এলাকার ডক্টর এস পি মুখার্জি রোডের একটি আবাসনে থাকেন পার্থবাবু, গৌরীদেবী ও অয়ন। অভিযোগ, সরস্বতী পুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত মাইক ও ডিজের তাণ্ডব চলছিল পাড়ায়। রাত পৌনে একটা নাগাদ গৌরীদেবী অসুস্থ জানিয়ে অয়ন তারস্বরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, তখনই তাদের বাড়িতে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ইটের আঘাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান গৌরীদেবী ও পার্থবাবু। অভিযোগ, তাঁদের মারতে ইট হাতে দেওয়াল টপকে রেলিং বেয়ে উঠে পড়ে এক যুবক। এমনকী এলোপাথাড়ি লাথি চালিয়ে বাড়ির দরজা ভাঙারও
চেষ্টা করে। পুরো ঘটনাটি ঘটায় ওই পাড়া ও আশপাশের এলাকারই কিছু যুবক। ওই পরিবারের আরও অভিযোগ, হামলার খবর জানিয়ে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও ঢিলছোড়া দূরত্বে থাকা দমদম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি।
এ দিন পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪১, ৪৫০, ৪২৭, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০ ধারাটি জামিনঅযোগ্য ধারা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’ অজয়বাবু আরও বলেন, ‘‘ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশ ঠিক সময়ে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। প্রাথমিক তদন্তে ওই রাতে ডিউটি অফিসারের কর্তব্যে গাফিলতির কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে রাতে ফের পার্থবাবুদের বাড়িতে যান বিধাননগর কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। তাঁদের আবাসনের সামনে কোনও ধরনের নিরাপত্তারক্ষী লাগবে কি না, সে ব্যাপারেও প্রস্তাব দেন তাঁরা। ঘোষ দম্পতি তখন নিরাপত্তারক্ষী লাগবে না বলে জানালেও বিকেলের দিকে ওই বাড়ির সামনে পুলিশের জিপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে এ দিন পার্থবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ আসে। এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসুও পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলেন। কিন্তু সবাই ধরা না পড়া পর্যন্ত আতঙ্ক কাটছে না। বিষয়টা থিতিয়ে গেলে ওরা বদলা নিতে ফের চড়াও হবে না তো?’’
দমদম থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অভিযুক্তেরা কেউ বাড়িতে নেই। তাদের মধ্যে এক জন বাউন্সারের কাজ করত বলে জেনেছে পুলিশ। তার খোঁজে হাওড়ার কয়েকটি এলাকায় হানাও দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
এ দিকে পুলিশ হানা দিয়ে স্থানীয় যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়ায় আতঙ্কও ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনার পরে ‘অতি সক্রিয়’ পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। যদিও পুলিশের দাব, যথেষ্ট প্রমাণ সহযোগেই অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছে। প্রয়োজনে টিআই প্যারেডও করা হবে।