অভিশপ্ত মালয়েশীয় বিমানের যাত্রীদের বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। এই খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করলেন আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়কে, যাঁর ভাইপো সস্ত্রীক ছিলেন বিমানটিতে।
এমএইচ-৩৭০। মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের ওই উড়ানে চেপে মিলনবাবুর ভাইপো মুক্তেশ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী জিয়াওমো বাই কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাচ্ছিলেন। ৮ মার্চ বিমানটি আকাশ থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ইস্তক বিস্তর ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে মুখোপাধ্যায় পরিবারের উপর দিয়ে। মুক্তেশের বাবা-মা মলয় ও উমা মুখোপাধ্যায় থাকেন মুম্বইয়ে। তাঁরা ছুটে যান বেজিংয়ে, মুক্তেশের দুই শিশুপুত্রের কাছে। কলকাতা থেকে বেজিং রওনা দেন মিলনবাবুও। ক’দিন আগে তিনি অবশ্য কলকাতায় ফিরে আসেন।
দু’সপ্তাহের দোলাচল শেষে সোমবার রাতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, বিমানটি ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এবং যাত্রীদের বেঁচে ফেরার আশা নেই। মঙ্গলবার সকালে সে খবর উঠে এসেছে খবরের কাগজের শিরোনামে। এ দিনই দুপুর সওয়া দু’টো নাগাদ মিলনবাবুকে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। “আপনাদের সঙ্গে আমরা আছি। কোনও বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন হলে সঙ্কোচ করবেন না। আপনাদের দুর্দিনে আমরা পাশে থাকতে চাই। আপনাদের পরিবারের প্রতি আমার সহানুভূতি রইল।” প্রবীণ আইনজীবীকে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতা থেকে এ দিন সন্ধের উড়ান ধরে মুম্বই গিয়েছেন মিলনবাবু। রাতে সেখান থেকে তিনি বলেন, “এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করায় আমরা কৃতজ্ঞ। সত্যিই তো! কখন কী প্রয়োজন হয়, বলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, দরকার হলে নিশ্চয়ই জানাব।” মিলনবাবুর দাদা, অর্থাৎ মুক্তেশের বাবা মলয়বাবুও এ দিন বেজিং থেকে মুম্বই ফিরে এসেছেন। মুক্তেশের মা রয়ে গিয়েছেন দুই নাতির কাছে। মিরাভ ও মাইলস মুক্তেশের দুই ছেলের বয়স যথাক্রমে ৭ ও ২। দু’জনকে পাকাপাকি ভাবে ভারতে আনতে চান মিলনবাবুরা। এমএইচ ৩৭০-র যাত্রীদের ভবিতব্য নিয়ে যখন ঘোর সংশয়, তখনই ওঁরা ঠিক করে ফেলেছিলেন যে, বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে আসবেন। বুধবার মুম্বইয়ের পারিবারিক আদালতে সেই আবেদনই করতে বেজিং থেকে চলে এসেছেন মলয়বাবু। তাঁকে সাহায্য করতে গিয়েছেন আইনজীবী ভাই। খোদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখে বিমানের পরিণতির কথা শুনে মিলনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কোনও না কোনও ভাবে শেষ তো হতেই হবে! কত দিন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকব? এখন বাচ্চাগুলোর কথা ভাবতে হবে!”
এর পরে কী করবেন? মিলনবাবু জানিয়েছেন, এ দিন তাঁরা মালয়েশিয়ার সরকারকে ই-মেল করে জানতে চেয়েছেন, কবে কোথায় তাঁদের যেতে হবে। ওঁদের আশা, শিগগিরই জবাব পাবেন।