দুর্গাপুজোর বিসর্জনের নির্ঘণ্টের মধ্যে পড়ে গিয়েছে ঈদুজ্জোহা। দু’টি উৎসবই যাতে সুষ্ঠু ভাবে পালিত হয়, তা নিশ্চিত করতে এ বারও শহরের বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জনের বিকেন্দ্রীকরণের উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়টি এ বার নিজেই তদারকি করতে চান তিনি।
পুজোর পরে বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ঈদুজ্জোহার ব্যস্ততা থাকবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, যাঁরা ৩ অক্টোবর, দশমীর দিনে বিসর্জন করতে চান, করতে পারেন। একাদশীর (৪ অক্টোবর) দিনও বিসর্জন করা যাবে। তবে ৬ তারিখ ঈদুজ্জোহা থাকায় তার আগের দিন, ৫ অক্টোবর (দ্বাদশী) বিসর্জন দেওয়া যাবে না। ৬ অক্টোবর (ত্রয়োদশী) রাত ৮টার পরে অর্থাৎ ঈদুজ্জোহার ব্যস্ততা কমলে ফের বিসর্জন চালু হবে। ৭ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। তাই ৬ অক্টোবর রাতভর বিসর্জন করা যাবে। রাজ্যের সর্বত্রই এই নির্ঘণ্ট মানার জন্য পুলিশ প্রশাসন-সহ সমস্ত পুজো কমিটি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মমতা। দুই সম্প্রদায়ের দুই উৎসবের মরসুমে যাতে কেউ শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে, সে জন্যও বারংবার সকলকে সতর্ক থাকতে এবং কোনও প্ররোচনায় পা না দিতে বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে নব কলেবরে সেজে ওঠা নজরুল মঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভার বিচারে শহরের যে সব দুর্গাপুজো শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে তাদের পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ ও পুরসভার পদস্থ কর্তারা এবং নাখোদা মসজিদ-সহ বেশ কয়েকটি মসজিদের ইমামেরা হাজির ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানেই শহরে ট্রাফিকের হাল ফেরাতে পুলিশ ও পুরসভাকে আরও তৎপর হতে নির্দেশ দেন মমতা। সেই বিষয়েই ওঠে বিসর্জনের প্রসঙ্গ।
বিসর্জনের নির্ঘণ্টের ব্যাপারে ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকা পুজো কমিটির উদ্যোক্তা এবং ইমামদের মতও নেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দিষ্ট দিনগুলিতে বিসর্জনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে আগের বছরেই শহরের বিভিন্ন দিকে ঘাটের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন সারা শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বার বিসর্জনের ঘাট আরও বাড়ানো দরকার বলে জানিয়ে দেন মমতা। তাঁর কথায়, “ঘাটের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আরও বাড়াতে হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে উত্তরের পুজোর বিসর্জন উত্তরে এবং দক্ষিণের বিসর্জন দক্ষিণেই করা হয়।” বড় বড় পুজোর বিসর্জন কোথায় হবে, তার তালিকাও আগেভাগে করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমি নিজেও তা দেখব।” পুলিশ ও পুর-প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার মধ্যেই উঠে আসে শহরে যান চলাচলের সমস্যার কথা। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন বড় রাস্তায় অনেক সময়ে বেদী বা ঘর বানানো থাকে। যার জন্য গাড়ির গতি কমে যায়, যানজট হয়। যেমনটি রয়েছে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়-চার নম্বর ব্রিজের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওখানে প্রতিদিনই যানজট থাকে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পুলিশ ও পুরসভা এটা একটু দেখুক।” তিনি বলেন, “আলিপুর কোর্টের কাছেও রাস্তার মাঝখানে এমন একটা বেদী ছিল। আমাদের ছেলেরা তৈরি করেছিল। আমি সমস্যাটা দেখে এক দিন ওটা সরিয়ে নিতে বললাম। এক সেকেন্ডে কাজ হয়ে গেল। পরমার সামনে উড়ালপুলের কাজ আইনি জটিলতায় আটকে ছিল। এ বার তা কেটে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই কাজ ফের শুরু হবে। আগামী বছর দেড়েকের মধ্যেই তা হয়ে যাবে।”
নতুন করে গড়ে ওঠা নজরুল মঞ্চ ঘুরে দেখে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ববি (মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম)-কে বলেছিলাম দ্রুত কাজ করতে। এক বছরেই মঞ্চ চালু করা গেল। খুব ভাল হয়েছে। শিল্পীরাও খুশি। শব্দের ব্যবস্থাও ভাল।” মমতা জানান, এত দিন সায়েন্স সিটিতে নানা সরকারি অনুষ্ঠান করতে হত। এ বার নজরুল মঞ্চে হবে। আগামী ২৪ জুলাই মহানায়কের স্মরণ-অনুষ্ঠান ওই মঞ্চে হবে বলে এ দিন ঘোষণা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই বলেন, “শহরে আরও ভাল ভাল প্রেক্ষাগৃহ দরকার। ‘ধনধান্যে’-র কাজ চলছে। রবীন্দ্র সদন, নন্দন চত্বর জুড়ে একটি সংস্কৃতি অঙ্গন করার পরিকল্পনাও আমাদের আছে। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে।”