দিনটা ছিল ১৮ অক্টোবরের সন্ধ্যা। কলকাতার আকাশ-সীমায় ওড়া বিমানগুলির সঙ্গে আচমকাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) অফিসারদের। দেখতে দেখতে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়। অবস্থা থাকে সেই তিমিরেই। অবশেষে পরের দিন ভোরে, প্রায় ন’ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই অবস্থার জন্য আঙুল তুলেছিল বিএসএনএল-এর খারাপ নেটওয়ার্কের দিকে। এটিসি অফিসারদের দক্ষতায় সে দিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু, এই রকম পরিস্থিতিতে কোনও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। অভিযোগ, বিভিন্ন রেডারের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরের যোগাযোগের জন্য একমাত্র যে অপটিক্যাল ফাইবার রয়েছে, তা বিকল হয়ে যাওয়ায় সে দিন ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিড়ম্বনায় পড়ে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষও তড়িঘড়ি একটি বিকল্প ব্যবস্থা চালু করে। তা সত্ত্বেও বিএসএনএল-এর উপর ভরসা রাখতে না পেরে, এ বার নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে বিমানবন্দর।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিএসএনএল-এর বিকল্প খুঁজতে অন্য বেসরকারি কেব্ল সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কমিউনিকেশন ন্যাভিগেশন সার্ভেইল্যান্স (সিএনএস) গিল্ডের এক অফিসার বলেন, “তিনটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই বিমানবন্দরের কয়েকটি দফতরে যোগাযোগ পরিষেবা দিচ্ছে। দ্রুত একটা ব্যবস্থা হবে বলে আশা।”
১৮ অক্টোবরের ঘটনার পরে বিএসএনএল কর্তৃপক্ষও তড়িঘড়ি এক বিকল্প ব্যবস্থা চালু করেছে বিমানবন্দরে। নতুন পরিষেবার নাম ‘মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন সিস্টেম’। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, অপটিক্যাল ফাইবারের অনুপস্থিতিতে যাতে রেডিও ওয়েভ-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়, সে জন্য দু’টি ডিশ বসেছে নাগেরবাজারের কাছে দমদম টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ও কলকাতা বিমানবন্দরে। অপটিক্যাল ফাইবার কেটে গেলে, এ বার থেকে তথ্য আগে যাবে দমদম টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। তার পর ওই ডিশ থেকে রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে দ্রুত পৌঁছবে বিমানবন্দরে। মেন লাইন বসে গেলেই এই বিকল্প পরিষেবাটি নিজে থেকেই কাজ করবে বলে দাবি ওই আধিকারিকের।
বিএসএনএল মোবাইল সার্ভিসেস-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ পালের আশ্বাস, “আগে একটি লাইন থাকায় অসুবিধে হত। নতুন পরিষেবায় ভবিষ্যতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তবে, বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুধু ১৮ অক্টোবরই নয়, আগেও বহু বার বিএসএনএল-এর নেটওয়ার্কের জন্য চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েতে হয়েছে এটিসি অফিসারদের। তাই সদ্য চালু হওয়া ব্যবস্থাকে স্বাগত জানালেও, তার উপর ভরসা করতে পারছে না সিএনএস।
সিএনএস-এর ওই আধিকারিকের দাবি, “আমরা পুরোপুরি ভাবে বিএসএনএল-এর উপর নির্ভর করতে চাইছি না। বিএসএনএল এখানে একচেটিয়া ব্যবসা করছে বলে তাদের পরিষেবার এই ঢিলেঢালা হাল। কোনও বেসরকারি সংস্থা টেক্কা দিলে পরিষেবার অনেক উন্নতি হবে।” কলকাতার এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার চন্দন সেনও বলেন, “মূলত বিএসএনএল-এর নেটওয়ার্কের জন্যই সমস্যাগুলো হচ্ছে। আমরা বিকল্প নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করছি। আশা করছি তাড়াতাড়িই এই সমস্যা মিটে যাবে।”