পড়ে জমি, বিশ বাঁও জলে ‘আর্বান হাট’

পাঁচিল ঘেরা জমির একপাশে পরিত্যক্ত ছোট হোর্ডিং। এটুকুই প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। প্রতিশ্রুতি ওই জমিটিকে ঘিরে। যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া কিছু মানুষ। প্রতিশ্রুতির নাম ‘আর্বান হাট’। যে হাটেই প্রদর্শনী, বিকিকিনি ও কর্মশালার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ার কথা ছিল। অন্তত প্রশাসনের তেমনই দাবি ছিল। কিন্তু সেখানেই এখন ঝুপড়ি গড়ে বসবাস করছেন কিছু মানুষ।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:১০
Share:

ঝুপড়িতে ভরে গিয়েছে প্রকল্পের জমি। ছবি: শৌভিক দে।

পাঁচিল ঘেরা জমির একপাশে পরিত্যক্ত ছোট হোর্ডিং। এটুকুই প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। প্রতিশ্রুতি ওই জমিটিকে ঘিরে। যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া কিছু মানুষ। প্রতিশ্রুতির নাম ‘আর্বান হাট’। যে হাটেই প্রদর্শনী, বিকিকিনি ও কর্মশালার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ার কথা ছিল। অন্তত প্রশাসনের তেমনই দাবি ছিল। কিন্তু সেখানেই এখন ঝুপড়ি গড়ে বসবাস করছেন কিছু মানুষ।

Advertisement

ঘটনাস্থল সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক চত্বর। উন্নয়ন ভবন ও ময়ূখ ভবনের বিপরীতে সেন্ট্রাল পার্কের বাইরের দিকের একটি জমিতেই ‘আর্বান হাট’ নামক ওই প্রকল্প তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কয়েক বছর আগের সেই প্রতিশ্রুতি আজও কার্যকরী হয়নি। প্রশাসন এখনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু এই ঝুপড়িবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে কী ভাবে, কবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যাবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন।

মূলত রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মানোন্নয়ন, উৎপাদিত পণ্যের স্থায়ী একটি বাজার ও বিপণনের কথা মাথায় রেখেই ‘আর্বান হাট’ প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। যে কারণে ওই জমিও নির্দিষ্ট করা হয়েছিল বাম আমলেই। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, ওই জমিতে মূলত বছরভর বিকিকিনির ব্যবস্থা অর্থাৎ স্থায়ী বাজার, বিপণনের দিকেই জোর দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং ভিন্ রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনাও ছিল। তাই সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য থাকার ব্যবস্থার কথাও চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল।

Advertisement

২০০৮-০৯ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের কথা জানিয়েছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সেই অনুসারে সেন্ট্রাল পার্কের বাইরে স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণের এক প্রান্তে ওই জমি চিহ্নিত করে ঘেরা হয়েছিল। পরে আর কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একাংশের।

বাম আমলে কাজ শুরু না হলেও দায়িত্ব হাতে নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকারও দ্রুত এই প্রকল্প কার্যকরী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মানোন্নয়নে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ।

এ ব্যাপারে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রকল্পটি বাম আমলে হাতে নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কার্যকরী করতে গিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। বস্তুত ওই প্রকল্প কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়েই সংশয় ছিল। তাই পুনরায় ওই প্রকল্প খতিয়ে দেখে নতুনকরে পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। তাই সময় লাগছে। বর্তমান রাজ্য সরকার আরও সুসংহত ভাবে প্রকল্পটি করতে চাইছে।

কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে স্থায়ী বাজার-সহ বিপণন নিয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ-সহ পরিকাঠামোর উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনার কথা বাম আমল থেকেই শোনা গিয়েছিল। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু কাজ হলেও সার্বিক ভাবে সুসংহত কোনও পরিকল্পনা হচ্ছে না। ‘আর্বান’ হাট প্রকল্প আজও না হওয়া তারই একটি প্রমাণ।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অপর একটি সূত্র বলছে, ওই জমিতে ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। ঝুপড়িবাসীদের ক্ষেত্রে কোনও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ না আসায় ওখানে কোনও কাজই শুরু করা যায়নি। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য রাজ্য জুড়ে কাজ চলছে। নিশ্চিত ভাবেই এখানেও সেই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রকল্পটি সম্পর্কে সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement