হোটেলের ঘরে বসে থরথর করে কাঁপছিলেন তরুণী। বিহারে বাড়ি ফেরার কথা বলতেই পুলিশের হাত চেপে ধরে তাঁর কান্না: “না, আমি ফিরতে চাই না! একবার বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই মেরে ফেলবে, নয়তো জবরদস্তি বিয়ে দেবে অন্য কোথাও!”
তাঁর পাশে বসা যুবকও অসহায় ভঙ্গিতে পুলিশের সাহায্য চাইছেন। ওই হোটেলের একতলাতেই তখন মেয়েটির বাবা-কাকারাও অপেক্ষা করছেন। ঘরের মেয়েকে না-নিয়ে কিছুতেই ফিরবেন না তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে তেঘরিয়ার অতিথিশালায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল। টানাপড়েনে মেয়েটি ও তাঁর সঙ্গী যুবককে ‘আশ্রয়’ দিয়েছে পুলিশ। কাগজপত্র দেখিয়ে তাঁরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। যুবকের নাম ঋষুকুমার। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন।
তাঁর বাড়ির লোকের অবশ্য অন্য দাবি। বিহারের মধুবনির রাজনগর থানায় গত ২১ জুলাই তাঁরা মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালতে বিয়ের নোটিসের কাগজে মেয়েটির বয়স ১৯ বছর লেখা থাকলেও বাবার দাবি, মেয়ের বয়স ১৪ বছর।
এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছে রাজ্য মহিলা কমিশন। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, “পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে মেয়েটিকে খুনের ষড়যন্ত্রও হতে পারে!”
বাগুইআটি থানার পুলিশ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিহার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। বিহার পুলিশও আসছে। সেখানকার কোনও হোমে মেয়েটিকে পুনর্বাসন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
বিহারের মধুবনি জেলার রাজনগর অঞ্চলের সিমরি গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণ-তরুণী। গত ২০ জুলাই থেকে তাঁরা গ্রামছাড়া। দিন কয়েক আগে কলকাতায় এসে তাঁরা শিয়ালদহের একটি হোটেলে উঠেছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তেঘরিয়ার একটি অতিথিশালায় ওঠেন। কিন্তু ওই রাতেই মেয়েটির বাবা অরুণকুমার সিংহ ও কাকা দলজিৎকুমার সিংহ সেখানে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। মেয়েটি দেখা করতে রাজি না-হওয়ায় তখনকার মতো তাঁরা চলে যান।
সকাল থেকেই ওই অতিথিশালায় ফের গোলমাল শুরু হয়। মেয়েটির বাবা-কাকা ফের কিছু লোকজন নিয়ে হাজির হলে তখনও মেয়েটি তাঁদের সঙ্গে দেখা না-করার বিষয়ে অনড় থাকেন। শেষমেশ পুলিশে খবর দেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। পুলিশ হাজির হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়েটি।
ওই অতিথিশালার ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু গোস্বামী বলেন, ঘর বুকিংয়ের সময়ে যুবক তাঁর ভোটার কার্ডের কপি দেখিয়ে বলেন, তাঁর বয়স ২১ বছর। মেয়েটিও আদালতে বিয়ের নোটিসের কাগজ দেখিয়ে তাঁর বয়স ১৯ বছর বলে জানিয়েছেন।
আপাতত অবশ্য পুলিশ বিষয়টির নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে। স্থানীয় পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আমাদের প্রধান চিন্তা মেয়েটির নিরাপত্তা নিয়ে। তাঁর বয়সের দিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”