অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।
এ যেন আক্ষরিক অর্থেই চোর-পুলিশ খেলা!
প্রতারণায় অভিযুক্তকে ধরতে বাড়িতে হানা দিয়েছে এক দল পুলিশ। ফাঁদ এড়িয়ে অভিযুক্ত যাতে পালাতে না পারেন, তাই বাড়ির কার্নিশে ওত পেতে রয়েছেন আর এক পুলিশ অফিসার। হঠাৎই মড়মড় করে আওয়াজ। উপরে তাকিয়ে ওত পেতে থাকা অফিসার দেখলেন, তিন তলার জানলা ভেঙে নেমে আসছে পাহাড়প্রমাণ একটি চেহারা!
ভাগ্যি ভাল, বিশাল ওই চেহারা কার্নিশে দাঁড়ানো পুলিশ অফিসারের গায়ে পড়েনি। পড়েছে পাশের বাড়ির একটি টালির চালে। ব্যাপারটা কী?
পুলিশ জানায়, গরফা এলাকার বাসিন্দা, পেশায় প্রোমোটার মেঘনারায়ণ সিংহের নামে একটি প্রতারণার মামলা রয়েছে। অভিযোগ, একটি ইস্পাতের রড প্রস্ততকারী সংস্থার কাছ থেকে ৭ কোটি টাকার জিনিস নিয়েও সেই টাকা শোধ করেননি। এর পরেই আদালতের দ্বারস্থ হয় সংস্থাটি। পুলিশ জানায়, মামলায় হাজিরা না দেওয়ার কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় মেঘনারায়ণের নামে। সেই পরোয়ানা নিয়েই মঙ্গলবার রাতে গরফার কালীতলা রোডে মেঘনারায়ণের বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, মেঘনারায়ণের বাড়িতে ঢোকে গরফা থানার এক দল পুুলিশ। অভিযুক্ত ফাঁক গলে পালাতে পারেন, এই আঁচ করে এক অফিসারকে বাড়ির দোতলার কার্নিশে মোতায়েন করা হয়েছিল। ভিতরে ঢুকেও প্রথমে মেঘনারায়ণের হদিস পায়নি পুলিশ। তাঁর পরিবার জানায়, মেঘনারায়ণ বর্ধমানে রয়েছেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি চলার সময়ই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে অভিযুক্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির তিন তলায় লুকিয়ে ছিলেন মেঘনারায়ণ। গ্রেফতারির ফাঁদ এড়াতে তিন তলার একটি শৌচাগারের জানলা গলে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিরাট চেহারা নিয়ে জানলা দিয়ে গলে পালানোর সময় ভেঙে যায় সেটি। টাল সামলাতে না পেরে হুড়মুড় করে পড়েন পাশের বাড়ির টালির চালে। পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্ত পালাচ্ছে দেখে কার্নিশে দাঁড়ানো ওই অফিসারও লাফ দিয়ে পড়েন মেঘনারায়ণের ঘাড়ে। খানিকটা ধস্তাধস্তির পরে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন বাকি পুলিশকর্মীরাও। পাকড়াও করা হয় মেঘনারায়ণকে। দেখা যায়, টালির চালে পড়ে যাওয়ায় নাক ভেঙেছে অভিযুক্তের। হাতে-পায়ে চোট পেয়েছেন ওই পুলিশ অফিসারও।
পুলিশ জানায়, রাতেই মেঘনারায়ণ ও আহত অফিসারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পরে বুধবার অভিযুক্তকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়।