এক ধাক্কায় জরিমানার পরিমাণ তিন হাজার টাকা থেকে ১০০ টাকায় নামিয়েছে সরকার। কার্যত তুলে দেওয়া হয়েছে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান যে বৈধ, তা জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এ বার ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যানের পক্ষে নতুন দাবি তুলল ট্যাক্সিচালক ও মালিকদের একটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’(বিটিএ)-এর সভাপতি বিমল গুহ জানান, শহরে নির্দিষ্ট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড না করলে প্রত্যাখ্যান এড়ানো যাবে না। বিমলবাবুর এই দাবির পরেই অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, এত সুবিধা পেয়েও প্রত্যাখ্যানের পথ থেকে সরছেন না ট্যাক্সিচালকেরা। উল্টে তাঁদের হয়ে সাফাই গাইছেন সংগঠনের নেতারাও।
প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। ট্যাক্সিচালক সংগঠনগুলির দাপটের সামনে ইতিমধ্যেই নতি স্বীকার করেছে সরকার। এ বার এই নতুন বায়নাক্কার সামনেও সরকার ঝুঁকে পড়ে কি না, সেটাই দেখার।
পুলিশ সূত্রে খবর, শহরে কয়েকটি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ইতিমধ্যেই রয়েছে। সম্প্রতি শহর জুড়ে প্রায় ১৪টি ‘ট্যাক্সি বে’ও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সব স্ট্যান্ডেও ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করা হয়। উদাহরণ হিসেবে অনেকেই টালিগঞ্জ মেট্রো কিংবা চাঁদনি চকের স্ট্যান্ডের কথা বলেছেন। টালিগঞ্জ থেকে ভরদুপুরে ধর্মতলা যাওয়ার কথা বললেই চালকেরা গরজ দেখান না। অথচ বিমানবন্দর শুনলেই এগিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পরে মিটারে যেতে রাজি, চাঁদনি চকে এমন ট্যাক্সি পাওয়া কার্যত অসম্ভব বলে অভিযোগ অনেকের। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরা বলছেন, রাস্তায় ‘ট্যাক্সি বে’ দেখলেই পাশ কাটিয়ে চলে যান ট্যাক্সিচালকেরা। “এই মনোভাব থাকলে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড করেও কী বা লাভ হবে,’’ প্রশ্ন কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের।
বিমলবাবু অবশ্য এ দিন সরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দাবি তুলে বলেছেন, রাজ্য সরকারকে বহু বার এই দাবি জানানো হয়েছে। সরকার চালকদের স্বার্থে একাধিক কথা ঘোষণা করলেও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড করেনি। ফলে ফের ২৩ ফেব্রুয়ারি পরিবহণ সচিবকে চিঠি দিয়ে দাবি জানানো হবে। দাবি না মানা হলে পরিবহণ ভবন ঘেরাও করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বিমলবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছে বামপন্থী সিটু ও তৃণমূলপন্থী ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস্ অ্যাসোসিয়েশন’। সিটুর নেতা অনাদি সাহুও বলছেন, “সরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড গড়তে হবে।” ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা শম্ভুনাথ দে-র কথায়, “প্রত্যাখ্যান রুখতে সরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ভাল দাওয়াই হতে পারে।”
১২ ফেব্রুয়ারি নজরুল মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কথা উঠে এসেছিল। তিনি বলেন, “শহরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এখনও তৈরি হয়নি। তা না হওয়া পর্যন্ত ফর নাথিং যেন ওদের কেস খেতে না হয়।” ট্যাক্সি স্ট্যান্ড হওয়া বা না-হওয়ার পিছনে সাধারণ নাগরিকের কোনও দায় নেই। তবে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড না হলে সেই সাধারণ মানুষকে কেন প্রত্যাখ্যাত হতে হবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। এর স্পষ্ট জবাব অবশ্য কোনও সংগঠনের নেতারাই দিতে পারেননি।
তবে প্রত্যাখ্যানের ঘটনা কমাতে এ দিন নতুন দাবির পাশাপাশি একটি দাওয়াইয়ের ঘোষণাও করেছে বিটিএ। বিমলবাবু জানান, তাঁরা নতুন একটি ‘কল সেন্টার’ খুলছেন। সেখানে ফোন করলেই শহরের যে কোনও প্রান্তে দশ মিনিটের মধ্যে ট্যাক্সি মিলবে বলে তাঁর দাবি। এই দাবির বাস্তবতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। একই সঙ্গে এক নাগরিকের প্রশ্ন, “কল সেন্টারে ফোন করেও আবার যাত্রীদের প্রত্যাখ্যাত হতে হবে না তো?”