ক্যালেন্ডারে মাঘ মাস। কিন্তু বাঘা শীতের দেখা নেই! বরং মহানগরীর পারদ এখন শুধুই ঊর্ধ্বমুখী। আবহবিদদের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিনেও শীতের দেখা তেমন মিলবে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকবে।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, রবিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। বাতাসে মেলেনি উত্তুরে হাওয়ার দাপটও। ফলে সরস্বতী পুজোর সকালটা অনেকেই সোয়েটার-শাল ছাড়া পথে বেরিয়েছেন। জানুয়ারির শেষ লগ্নে শীতের এমন হাল দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইনিংস শেষ করে শীত কি এ বার বিদায় নিল?
আবহবিদদের একাংশ অবশ্য বলছেন, শীত এখনও বিদায় নেয়নি। কিন্তু স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলার কোনও ইঙ্গিতও দিচ্ছে না সে। তাঁদের পূর্বাভাস, আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে মহানগরীর রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও পৌঁছে যেতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, রাজস্থানের দিকে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে আসছে। তার ফলে উত্তুরে হাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাপমাত্রা বাড়বে, আকাশও মেঘলা হতে পারে। এ সব দেখে অনেকেই মনে করছেন, এ মরসুমে এ ভাবে ঝিমোতে ঝিমোতেই বিদায় নেবে সে।
কেন এমন অবস্থা? আবহবিদেরা বলছেন, উত্তর এবং পূর্ব ভারতের শীতের সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার একটি সম্পর্ক রয়েছে। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে তীব্র ঠান্ডা হাওয়া ছুটে আসে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান পেরিয়ে সেই হাওয়া কাশ্মীরে ঢোকে। তার জেরে কাশ্মীর এবং সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি তুষারপাত হয়। সেখান থেকে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া বয়ে এলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে শীতের দাপট বাড়ে। একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার বিদায় এবং পরেরটি আসার মাঝে ফের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে।
আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এ বার পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তেমন জোরালো হচ্ছে না। ফলে উত্তর ভারতের অনেক জায়গাতেই কড়া ঠান্ডা পড়ছে না। উপরন্তু শীত শুরুর দিকে বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপ এবং তার পরে বাংলাদেশের একটি ঘূর্ণাবর্তের জেরে এ রাজ্যে উত্তুরে হাওয়ার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বার নানা প্যাঁচে শীত নিজেই কাবু হয়ে পড়েছে।
তবে শীতপ্রেমীদের কিছুটা হলেও আশ্বাস দিচ্ছেন গোকুলবাবু। তিনি বলছেন, “শীত এখনই বিদায় নেবে না। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব কাটলেই ফের গা-ঝাড়া দিয়ে উঠবে সে।”
এখন সেই আশাতেই দিন গুনছেন শীত-রসিকেরা।