দু’মাস আগেও সকালে বিভিন্ন বাজারে হানা দিত চার পাঁচ জনের একটি দল। আলু পেঁয়াজ থেকে শুরু করে শাক-সব্জির দর টুকে নিতেন তাঁরা। কোনও সব্জির দাম বেশি হলেই তাঁরা সতর্ক করতেন বিক্রেতাদের। আর এই দলকে দেখলেই সতর্ক হয়ে যেতেন বাজারের বিক্রেতারাও।
বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করে হানা দেওয়া এই টাস্ক ফোর্সকে গত দু’মাস ধরে আর দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযোগ, এনফোর্সমেন্ট টিমের নজরদারি উঠে যাওয়ার পর থেকেই ফের লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে বাজার-দর। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লঙ্কার দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ। দাম বেড়েছে পটল, ঝিঙে বা ঢ্যাঁড়শেরও। তবে এই সব সব্জির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বৃষ্টি না হওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তা হলে আলু বা পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?
বিক্রেতাদের এক অংশের মতে এনফোর্সমেন্টের নজরদারি কমে যাওয়ায় ফের আড়তদারেরা বেশি করে আলু-পেঁয়াজ মজুত করছেন। রাজ্যের আলু বেশি দামে ভিন্ রাজ্যে বিক্রিও করা হচ্ছে।
গত বছর আলুর দাম যখন বেড়ে গিয়েছিল তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যের আলু ভিন্ রাজ্যে বিক্রি করা যাবে না। আগে রাজ্যের চাহিদা মেটাতে হবে। এখন আলুর দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। অভিযোগ সেই নির্দেশ এখন আর মানছেন না আড়তদারেরা। ফলে স্থানীয় বাজারে জ্যোতি আলুর দাম গত এক মাসের মধ্যেই ১০ টাকা থেকে ১৬ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পেঁয়াজ হয়েছে ১৪ থেকে ১৮ টাকা। এমনকী, আদার দামও ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা ও রসুন ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি প্রতিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও পোস্তা বাজারের আড়তদারদের দাবি, আলু-পেঁয়াজের আমদানি কমে গিয়েছে। প্রতি দিন যত ট্রাক ভিন্ রাজ্য বা জেলা থেকে ঢোকে, তার থেকে অনেক কম ট্রাক বাজারে আসছে। আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের।
এনফোর্সমেন্ট বিভাগের এক কর্তার অবশ্য দাবি, “নজরদারির অভাব ঘটছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের ৬টি টিম কলকাতার ৪৮টি বাজারে রোজ ঘুরছে। দামও নিয়ন্ত্রণেই আছে। শুধু খুচরো বাজারে আলুর দাম একটু বেশি। আলুর পাইকারি দাম বেশি হওয়ার জন্য খুচরো বাজারে দাম বেশি হয়ে যাচ্ছে।” টাস্ক ফোর্স বাজারে আগের মতো নজরদারি চলছে বলে দাবি করলেও, খুচরো বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকারের গঠিত টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বাজারে এনফোর্সমেন্ট টিমের লোক কম দেখা যাচ্ছে।”
ক্রেতাদের অভিজ্ঞতাও তা-ই। মানিকতলার বাসিন্দা শ্যামল গুপ্ত বলেন, “গত এক মাসে ফের আলুর দাম ঊর্দ্ধমুখী হয়েছে। আদা, রসুন, পেঁয়াজের দামও বাড়ছে।” গড়িয়াহাট বাজারের আর এক ক্রেতা সুখময় চক্রবর্তী বলেন, “শুধু আলু-পেঁয়াজই নয়, অন্যান্য সব্জির দামও বেড়ে গিয়েছে।” মানিকতলা বাজারের এক বিক্রেতা আবার বলেন, “গত এক মাস ধরে কোনও বৃষ্টি নেই। ফলে পটল, ঝিঙে বা ঢ্যাঁড়শের দাম বেড়েছে। অন্যান্য বছর এই সময়ে পটলের যা দাম হয় তার থেকে এই বছর পটলের দাম পাঁচ থেতে দশ টাকার মতো বেশি।” বৃষ্টি না হলে এই দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
মাস তিনেক আগে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন বাজারে সরকারি ভাবে আলু সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন আর সেই গাড়ির দেখা মেলে না বলে অভিযোগ। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য কৃষি দফতরের তরফ থেকে সেই সময়ে আলু সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। পুরসভা শহরের বিভিন্ন বাজারে সেই আলু পৌঁছে দিত। কেজি প্রতি ১২ টাকা দরে ওই আলু বিক্রির করা হত। কিন্তু নতুন বছরে কৃষি দফতরের তরফ থেকে কোনও আলু- পেঁয়াজ আর সরবরাহ করা হয়নি বলে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভার মার্কেটিংয়ের চিফ ম্যানেজার অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেই সময়ে বাজারে সরকারি দরের আলু-পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়াই ছিল পুরসভার কাজ। সেই কাজ এখন বন্ধ আছে।”