একবালপুর-খুনে ফরেন্সিক তদন্ত

খুন করে মা ও মেয়েদের দেহ শৌচাগারে ফেলে রেখেছিল খুনিরা। বুধবার একবালপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমনটাই অনুমান করছেন রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এক কামরার ওই ফ্ল্যাটের শৌচাগারটি খুবই ছোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

একবালপুরের সেই দোকানে ফরেন্সিক দল। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র।

খুন করে মা ও মেয়েদের দেহ শৌচাগারে ফেলে রেখেছিল খুনিরা। বুধবার একবালপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমনটাই অনুমান করছেন রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এক কামরার ওই ফ্ল্যাটের শৌচাগারটি খুবই ছোট। তদন্তকারীদের মতে, দুষ্কৃতীদের ধারণা ছিল, নিহতদের রক্ত পুরোটাই নিকাশি নালা দিয়ে ধুয়ে যাবে। ফলে শৌচাগার ধুয়ে ফেলে প্রমাণ লোপাটেও বিশেষ সময় লাগবে না।

Advertisement

দেহ উদ্ধারের তিন দিন পরে বুধবার একবালপুরের ইয়াসিন মঞ্জিলে পুষ্পাদেবীর ফ্ল্যাটে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালেই লালবাজার থেকে ফরেন্সিক পরীক্ষার আর্জি পাঠানো হয় বেলগাছিয়ায় ফরেন্সিকের সদর দফতরে। তার পরেই বায়োলজি বিভাগের বিজ্ঞানী শিপ্রা রায়ের নেতৃত্বে একটি দল একবালপুরে যায়। পুষ্পাদেবীর ফ্ল্যাটে খাটের পাশের মেঝে, প্যাকিং বাক্স, শৌচাগারের দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। তবে ঘটনার পর থেকে পুষ্পাদেবীর পরিজনেরা ওই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করায় অনেক তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “পুলিশের উচিত ছিল, দেহ উদ্ধারের পরেই ফ্ল্যাটটি সিল করে দেওয়া। যাতে অপরাধের তথ্যপ্রমাণ নষ্ট না হয়।” পুলিশের গাফিলতিতে যে প্রমাণ নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে, তা মেনে নিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। তাঁরা বলছেন, ৩১ মার্চ তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢোকার পরেই ওই রক্তের দাগ পুলিশের নজরে আসা উচিত ছিল। কী ভাবে তা নজর এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে বিস্মিত লালবাজারের শীর্ষকর্তারা।

এই ঘটনায় প্রথম থেকেই একবালপুর থানার ওসি ও অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। সে কথা মেনে নেওয়া হয়েছে পুলিশ সূত্র থেকেও। লালবাজার সূত্রের দাবি, ৩১ মার্চ অপহরণের মামলা দায়ের হওয়ার পরে গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখাকে সরকারি ভাবে বিষয়টি জানায়নি একবালপুর থানা। সাধারণত, কলকাতায় অপহরণের মামলা হলে থানার পাশাপাশি গুন্ডাদমন শাখাকেও কাজে লাগানো হয়।

Advertisement

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ৩১ মার্চ রাত বারোটা নাগাদ পুলিশকে নিয়ে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ঢোকার সময়ে মেয়ে পুষ্পার মোবাইল থেকে একটি এসএমএস পান তাঁর বাবা পরেশনাথ সিংহ। তাতে লেখা ছিল, “সরি, সরি, সরি। ভেরি সরি। হাম আপকে ফোন নেহি উঠা রহা হ্যায়। হাম সাত বাজে ফোন করেঙ্গে।” কিন্তু এই এসএমএসের ঘটনা জানার পরেও তদন্তকারীরা কেন অপহরণের ঘটনা নিয়ে তত্‌পর হলেন না, তা নিয়েও লালবাজারের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ হেফাজতে থাকা সিকন্দর ও আমিনকে জেরা করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মাটি খুঁড়তে আসা দুই শ্রমিককেও। তবে খুনের হাতিয়ার, দেহ বহনের ট্রাঙ্ক এবং দেহ পোঁতার পরে মেঝে প্লাস্টার করা মিস্ত্রিদের খোঁজ চলছে বলে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement