উড়ালপুলে রেষারেষির বলি বাইক আরোহী

বহু আইন করেও শহর জুড়ে যানবাহনের রেষারেষি বন্ধ করা যায়নি। যার মাসুল কখনও দিতে হচ্ছে পথচারীদের, কখনও মোটরবাইক চালক কিংবা অন্য যানবাহনকে। আইন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনেই কী ভাবে এমনটা চলছে, প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। যে প্রশ্ন ফের উঠল সোমবার, নাগেরবাজার উড়ালপুলে একটি লরি ও জলের ট্যাঙ্কারের রেষারেষির জেরে মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যুর পরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১০
Share:

বহু আইন করেও শহর জুড়ে যানবাহনের রেষারেষি বন্ধ করা যায়নি। যার মাসুল কখনও দিতে হচ্ছে পথচারীদের, কখনও মোটরবাইক চালক কিংবা অন্য যানবাহনকে। আইন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনেই কী ভাবে এমনটা চলছে, প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। যে প্রশ্ন ফের উঠল সোমবার, নাগেরবাজার উড়ালপুলে একটি লরি ও জলের ট্যাঙ্কারের রেষারেষির জেরে মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যুর পরে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তারা অবশ্য এ দিনের দুর্ঘটনার পিছনে উড়ালপুলের সঙ্কীর্ণতাকেই দায়ী করেছেন। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম চঞ্চল চৌধুরী (৩৭)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোটরবাইকটির চালক রঞ্জন দাস।

পুলিশ সূত্রের খবর, পেশায় ভ্রমণ সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মালিক লেকটাউনের এ ব্লকের বাসিন্দা চঞ্চল এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ সহকর্মী রঞ্জনের মোটরবাইকে চেপে বেরিয়েছিলেন। বিমানবন্দর এলাকার একটি ব্যাঙ্কে কাজ সেরে নাগেরবাজার উড়ালপুল ধরে লেক টাউনের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখনই উল্টো দিক থেকে একটি লরি ও একটি জলের ট্যাঙ্কার আসছিল। অভিযোগ, তীব্র গতিতে লরির সঙ্গে রেষারেষি করতে গিয়ে জলের ট্যাঙ্কারটি রঞ্জনদের মোটরবাইকের পাশে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন দুই যুবকই। চঞ্চলের হেলমেট খুলে গেলে তাঁর মাথায় গুরুতর চোট লাগে। আরও অভিযোগ, ঘটনার পরে প্রায় দশ মিনিট উড়ালপুলের উপরেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন দুই যুবক। ঘটনাস্থলেই জলের ট্যাঙ্কার ফেলে চম্পট দেন চালক ও খালাসি। পরে পুলিশ দুই যুবককে তুলে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই চঞ্চলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ভর্তি করা হয় রঞ্জনকে।

Advertisement

যদিও ঘটনার পরে দুই যুবকের দশ মিনিট রাস্তায় পড়ে থাকার অভিযোগ মানতে চায়নি নাগেরবাজার ট্রাফিক গার্ড। তাঁরা জানান, উড়ালপুলের দু’দিকে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিককর্মীরাই উপরে জোরে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। নাগেরবাজার ট্রাফিক গার্ডের আইসি রিয়াজ খান বলেন, “উড়ালপুলের নীচ থেকে উপরে যেতে যেটুকু সময় লেগেছে। এর থেকে বেশি সময় ওই যুবকেরা রাস্তায় পড়ে ছিলেন না।”

এ দিনের দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই ওই উড়ালপুলে যানবাহনের রেষারেষি চলে। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। উড়ালপুলের দু’দিকে পুলিশ থাকলেও উপরে কী ঘটছে, তা সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশ উদাসীন থাকে। যদিও বাসিন্দাদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ ট্রাফিক আইসি রিয়াজ খান। তাঁর দাবি, “উড়ালপুলটি খুব সরু। দু’টি গাড়ি ঠিক মতো পাশাপাশি যেতে পারে না। তাই উপরে পুলিশ ডিউটি করতে গেলে দ্রুত চলা যানবাহন তাঁদেরই ধাক্কা মারবে।” ওই আইসি আরও বলেন, “উড়ালপুলের দু’দিকে পুলিশ দিয়ে, গার্ড রেল দিয়ে যত সম্ভব যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু গাড়ি ওই গার্ডরেলে ধাক্কা মেরেই চলে যায়।”

লেকটাউনে স্ত্রী অলিভিয়া ও এক বছরের মেয়ে খুশবুকে নিয়ে থাকতেন চঞ্চলবাবু। এ দিন তাঁর আত্মীয়া সাগরিকা সাহা বলেন, “কয়েক দিন আগেও মেয়ের জন্মদিনে দাদা কত আনন্দ করল। আজ সব শেষ!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement