দেরির ভূত যেন এয়ার ইন্ডিয়ার ঘাড় থেকে নামছে না! ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। মঙ্গলবার যেমন শুধু দেশের যাত্রী নয়, বিপাকে পড়লেন বিলেতযাত্রীরাও।
এ দিন এয়ার ইন্ডিয়ার সকালের উড়ান কলকাতা থেকে ছাড়ল পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে। কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছতে দেরি হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে লন্ডনের উড়ান ধরতে পারলেন না চিকিৎসক শ্যামল রায়ের মতো অনেক যাত্রী। বিমান সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে, ওই যাত্রীদের হোটেলে রেখে পরের উড়ানে লন্ডনে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু এই দেরির ফলে চিকিৎসক, পরিবেশকর্মী-সহ বিভিন্ন পেশার যাত্রীদের কর্মসূচির যে-ক্ষতি হল, তা পূরণ হবে কী ভাবে, বিমান সংস্থার কাছে তার সদুত্তর নেই। ভুক্তভোগীদের অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে মনস্থ করেছেন।
ইদানীং মাঝেমধ্যেই উড়ান দেরি করছে এয়ার ইন্ডিয়ার। তাই বিমান মন্ত্রক নির্দেশ দিয়েছে, দেরি করে উড়ান ছাড়ার প্রবণতা কমাতে হবে ওই সংস্থাকে। স্থির হয়েছে, ঠিক কী কারণে কোন উড়ান কতটা দেরিতে ছাড়ল, এ বার থেকে তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনও কর্মী বা অফিসার সেই দেরির জন্য দায়ী হলে তাঁর বা তাঁদের জরিমানাও হতে পারে। বিমান সংস্থা জানিয়েছে, এর আগেকার কয়েকটি দেরির ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে এ দিনের বিলম্বেরও। তবে আগের কোনও ঘটনাতেই তদন্তের ফল এখনও জানা যায়নি। এ দিনের ঘটনার তদন্ত কবে শেষ হবে, তা-ও জানাতে পারেনি বিমান সংস্থা।
তাই আশ্বস্ত হওয়া দূরের কথা, ক্ষোভ এতটুকুও কমেনি ভুক্তভোগী যাত্রীদের। যেমন অনাবাসী ভারতীয় শ্যামলবাবু এ দিন বলেন, “এত বছর অন্য সংস্থার উড়ানে কলকাতায় যাতায়াত করছি। এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। এ বার শেষ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজনে এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট কেটেছিলাম। তাতেই এই ভোগান্তি। যাক, এই প্রথম, এই শেষ!” দুপুর ১২টা নাগাদ দিল্লি পৌঁছে আড়াইটেয় লন্ডনের উড়ান ধরার কথা ছিল তাঁর। শ্যামলবাবুর সঙ্গেই আরও অনেক যাত্রী লন্ডনের পথে এ দিন আটকে পড়েন দিল্লিতে। ওই উড়ানের যাত্রী ছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তও। বুধবার দিল্লিতে গ্রিন বেঞ্চ বা পরিবেশ আদালতে তাঁর একটি মামলার শুনানি আছে। উড়ান ভীষণ দেরি করায় মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লিতে কয়েকটি জরুরি বৈঠক বাতিল করতে হয়েছে তাঁকে। “আদালতে মামলা করব ভাবছি,” বললেন ক্ষুব্ধ সুভাষবাবু।
উড়ানের এত দেরি কেন?
এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন দিল্লি থেকে কলকাতায় আসার আগে একটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ঠিক ছিল, সকাল ৯টায় এসে কলকাতার যাত্রীদের নিয়ে ওই বিমানই দিল্লি ফিরবে। শেষ পর্যন্ত বিমানটি বেলা পৌনে ২টোয় কলকাতায় আসে।
সুভাষবাবু জানান, সকাল ৮টায় কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে জানতে পারেন, উড়ান ছাড়বে বেলা সাড়ে ১১টায়। কিন্তু সাড়ে ১১টা তো দূরের কথা, দুপুর ১২টা গড়িয়ে ২টো বেজে গেল। তবু বিমান ছাড়েনি। কেন দেরি হচ্ছে এবং কখন উড়ান ছাড়তে পারে, বিমান সংস্থার কোনও অফিসার যাত্রীদের কাছে এসে তা জানানোর সৌজন্যটুকুও দেখাননি বলে অভিযোগ। সুভাষবাবু বলেন, “দেরির কারণ জানার অধিকার রয়েছে যাত্রীদের। কেন তা জানানো হবে না, আদালতে সেটাই জানতে চাইব।”
বিমান সংস্থার বক্তব্য, যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ঠিক কখন সেই উড়ান ছাড়বে, আগে থেকে সেটা বলা মুশকিল। তবে দেরির কারণ কেন জানানো হয়নি, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি বিমান সংস্থা।