উঁচু তলায় যোগ, বারবার তাই পার পেয়ে যান কলিম

পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে গাফিলতির অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছিল লালবাজার। ‘ক্লোজ’ করা হয়েছিল দুই সাব-ইনস্পেক্টরকে। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট থানার তখনকার ওসি-র বিরুদ্ধে একটি শব্দও খরচ করেননি লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। বরং তিনি বহাল তবিয়তেই আরও বছরখানেক ওই থানার ওসি-পদে ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

কাশীপুরের রাস্তায় কথা কাটাকাটি। শেখ মহম্মদ কলিমুদ্দিন ও জিয়াউর রহমান (ডান দিকে) । রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে গাফিলতির অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছিল লালবাজার। ‘ক্লোজ’ করা হয়েছিল দুই সাব-ইনস্পেক্টরকে। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট থানার তখনকার ওসি-র বিরুদ্ধে একটি শব্দও খরচ করেননি লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। বরং তিনি বহাল তবিয়তেই আরও বছরখানেক ওই থানার ওসি-পদে ছিলেন।

Advertisement

তিনি শেখ মহম্মদ কলিমুদ্দিন। বর্তমানে কাশীপুর থানার ওসি। রবিবার কাশীপুরে সিপিএম-কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পরে ফের খবরে এসে গিয়েছেন ১৯৮৬ ব্যাচের এই অফিসার। এ দিন কাশীপুরের রতনবাবু রোডে প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের আড়াল করার অভিযোগ করেছেন কলকাতা পুলিশেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিয়াউর রহমান। পদাধিকারবলে কাশীপুর থানার কাজ দেখার কথা জিয়াউরেরই।

এ দিন কাশীপুরে এক সিপিএম নেতার উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এলাকায় জড়ো হয়ে থাকা তৃণমূল-সমর্থকদের ঠেলে দলীয় অফিসে ঢোকানোর চেষ্টা করছিল তারা। সেই সময় তৃণমূল-সমর্থকেরা ধাক্কাধাক্কি করে পুলিশকে। জিয়াউরও হেনস্থার শিকার হন। আশপাশের কিছু মহিলা ঘিরে ধরেন পুলিশকে। কলিমুদ্দিন তখন কিছু যুবককে গলি দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। তা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জিয়াউর। তিনি প্রকাশ্যেই ওসি-কে বলেন, “আপনি অভিযুক্তদের ধরতে এসেছেন, নাকি বাঁচাতে!”

Advertisement

কর্তব্যে অবহেলার জন্য এক পুলিশকর্তা প্রকাশ্যে তাঁর অধস্তন অফিসারকে অভিযুক্ত করছেন, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না বলে জানাচ্ছেন লালবাজারের কর্তারা। শুধু তা-ই নয়, ঊর্ধ্বতন অফিসারের নির্দেশ না-মানার জন্য তৎক্ষণাৎ ওই ওসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন পুলিশকর্তাদের একাংশ।

কলকাতা পুলিশের কর্তারা ওই ওসি-র বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা না-নিলেও এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন। এই ঘটনার ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। এর পরেও লালবাজারের কর্তারা কলিমুদ্দিনকে রাত পর্যন্ত শো-কজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস না-দেওয়ায় এসি পর্যায়ের বহু অফিসারই বিস্মিত।

কলিমুদ্দিনের ব্যাচমেটদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০০০ সালের পর থেকেই কলকাতা পুলিশের এক আইপিএস অফিসারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন কলিমুদ্দিন। ২০০৯ সালে আলিপুর থানায় প্রথম ওসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সেই ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। তবে কলকাতা পুলিশেরই একটি অংশের মতে, ওই আইপিএস অফিসার এখন কলকাতা পুলিশে না-থাকলেও কলিমুদ্দিনের প্রভাব রয়ে গিয়েছে। কেন?

লালবাজারের এক কর্তা জানান, আলিপুরের পরে বেনিয়াপুকুর থানায় ওসি-পদে যোগ দেন কলিমুদ্দিন। তখন থেকে শাসক দলের এক সাংসদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। সেই সূত্রেই বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক প্রভাবশালী কর্তার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এই ওসি-র।

পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, প্রভাবশালী মহলে এই ধরনের যোগাযোগের ফলেই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের মুখে পড়েও পার পেয়ে যান কলিমুদ্দিন। পুলিশের অন্দরের খবর, কাশীপুর থানায় থাকার সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে বারবার সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ওই থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে ডিসি (উত্তর)-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

কলিমুদ্দিন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ওই সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কেউ কেন আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করবে, তা বুঝতে পারছি না।”

কলিমুদ্দিন এ দিন যে-অফিসারের (জিয়াউর রহমান) সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ, তাঁর সম্পর্কে লালবাজারের অফিসারেরা অবশ্য কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। তাঁরা বলছেন, জিয়াউর কলকাতা পুলিশের অন্যতম সিনিয়র এসি। ১৯৭৭ সালে এসআই-পদে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘদিন গোয়েন্দা বিভাগের বার্গলারি শাখায় কাজ করেছেন। ওই শাখার ওসি-পদেও ছিলেন।

কলিমুদ্দিন জানাচ্ছেন, তিনি এ দিন কখনওই দোষীদের আড়াল করতে চাননি। এসি-র কথা অমান্যও করেননি তিনি। তাঁর মন্তব্য, “এই ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর সময় এক জন উত্তেজিত হয়ে গেলে অন্য জনকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। এ দিন সেটাই হয়েছে। কেউ কেউ তা অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছে। আমার যা বলার, আমি ডিসি-কে জানিয়েছি।”

জিয়াউর এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “লালবাজার আমাকে যে-কাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিল, আমি সেটাই করেছি। এ ব্যাপারে আমি কারও কাছে কোনও জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement