নিজস্ব চিত্র
কায়া আছে, অথচ ছায়া নেই! শনিবারের বারবেলায় এমন ছায়াহীনের কাহিনির সাক্ষী হলেন অনেকেই। নিজের ছায়া খুঁজতে অনেকেরই গাত্রে হল ‘ব্যথা’।
শনিবার তখন ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ১১টা বেজে ৩৬ মিনিটের আশেপাশে। কলকাতা এবং আশপাশের অনেকেই আচমকা টের পেলেন মাথার উপর সূর্য রয়েছে বহাল তবিয়তে। অথচ কোনও উল্লম্ব বস্তুর ছায়া পড়ছে না। এমন দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় বছরে দু’বার৷ জানালেন ‘হুগলি অ্যামেচার অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাব’-এর সদস্য তথা কোয়ান্টাম ফিজিক্সের গবেষক মহম্মদ মহসিন। তাঁর কথায়, ‘‘কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণে অবস্থিত পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে বছরে দু’টি ছায়াবিহীন দিন (জিরো শ্যাডো ডে) আসে। সূর্য পৃথিবীপৃষ্ঠের সঙ্গে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে অবস্থান করলে এই ঘটনা ঘটে। সে সময় কোনও ব্যক্তি বা বস্তুর ছায়া কয়েক মিনিটের জন্য পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছে শনিবার।’’
বিজ্ঞান প্রাবন্ধিক মানসপ্রতিম দাস এই ঘটনার ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, সূর্য তার আপাত চলনে ২১ ডিসেম্বর পৌঁছয় মকরক্রান্তি রেখায়। ২১ মার্চ বিষুবরেখার উপর পৌঁছয়। ২১ জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপরে থাকে। ২৩ সেপ্টেম্বর পৌঁছচ্ছে বিষুবরেখায়। এর মধ্যে প্রতি অক্ষাংশেই দু’টি জিরো শ্যাডো ডে বা ছায়াহীন দিন দেখা যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গার সরাসরি রশ্মি দেওয়ার দরুণ কিছু ক্ষণের জন্য ছায়া দেখতে পাওয়া যাবে না।’’
কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় এই ঘটনা শনিবার দেখা গেলেও তমলুকে এটা দেখা গিয়েছে গত ২ জুন। আগামী ১০ জুলাইতেও একই ঘটনার সাক্ষী হবে তমলুক। খড়্গপুর, মেদিনীপুর, ডেবরা এবং বারুইপুরে দেখা গিয়েছে গত ৩ জুন। আবার দেখা যাবে ৯ জুলাই। ৪ জুন এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে ঝাড়গ্রাম, বাগনান এবং মহেশতলায়। আবার দেখা যাবে ৮ জুলাই। এ ছাড়া ৫ জুনের মতো ৭ জুলাইতে এই ঘটনার সাক্ষী থাকবে হাওড়া, কলকাতা, ঘাটশিলা এবং হাসনাবাদ।
এ নিয়ে হাতেকলমে পরীক্ষা চালানোর কথাও বলছেন মহসিন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যাপারটা ভুতুড়ে নয়। কলকাতা এবং হাওড়ায় ৫ই জুন এবং ৭ই জুলাই ছায়াহীন দিবস। সূর্য তার উত্তরায়ণের পথে ৫ই জুন এবং দক্ষিণায়ণের ফিরতি পথে ৭ই জুলাই কলকাতা-হাওড়ায় একই অক্ষাংশে পৌঁছবে। তার জেরেই এই দু’দিন ১১টা বেজে ৩৬ মিনিটে সূর্য ঠিক মাথার উপরে সু বিন্দুতে থাকবে। তাই কোনও উল্লম্ব বস্তুর ছায়া তার পাশে পড়বে না। ফলে ছায়া দেখাও যাবে না।’’
শনিবার ১১টা বেজে ৩৬ মিনিটের আশেপাশে এই ঘটনা ঘটলেও ঘড়ির কাঁটা কিছু দূর এগোতেই অবশ্য যে কে সেই। ভোজবাজিতে ছেদ টেনে আগের মতোই ফিরে এসেছে ছায়া। চলছে কুস্তিও।