রাজ চক্রবর্তী ফাইল চিত্র
করোনা অতিমারি আবহেও সফল ভাবে সামলে দিয়েছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তখনই তাঁর সাংগঠনিক এবং সাংস্কৃতিক দক্ষতা নজরে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিধানসভা ভোটে তাঁকে ব্যারাকপুর আসন থেকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। কঠিন আসন ব্যারাকপুর জিতে এসেছেন রাজ। ঠিক যে ভাবে তিনি চলচ্চিত্র উৎসবের দায়িত্ব সামলেছিলেন, সেই ভঙ্গিতে। সকলকে সঙ্গে নিয়ে, বিনীত এবং বিনম্র হয়ে। ফলে বিপুল জয়ের পর দলে রদবদলের সময় দলীয় সাংস্কৃতিক দায়িত্ব দেওয়ার জন্য রাজের চেয়ে যুতসই নেতা যে তিনি পাবেন না, তাতে আর আশ্চর্য কী! বস্তুত, এর আগে তৃণমূলে সে ভাবে কোনও সাংস্কৃতিক সেল ছিল না। ক্রীড়া সেল ছিল। সেটিকেই পুনর্গঠন করে সাংস্কৃতিক সেল তৈরি করা হয়েছে।
২০১৯ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (কেআইএফএফ) কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রাজ। তার আগে ওই পদে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। দায়িত্বশীল এবং হাই প্রোফাইল ওই পদে রাজের মনোনয়ন নিয়ে টলিউডের একাংশে বিতর্কও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রাজ ব্যক্তিগত ভাবে সমস্ত সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে পৌঁছে তাঁদের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিলেন। রাজের উদ্যোগেই ২০১৯ সালের ফিল্মোৎসব উতরে গিয়েছিল ভালয়-ভালয়। অতঃপর ২০২০ সালে করোনা অতিমারি আবহেও সংক্ষিপ্ত এবং মূলত বার্চুয়াল ফিল্মোৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেও প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজকেই। বাধ্যবাধকতা নিয়েও সে বছর তিনি সফল ভাবেই ফিল্মোৎসবের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
তার পরেই মমতা রাজকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করেন। রাজের সঙ্গেই টলিউডের একঝাঁক তারকা বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই জয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ওই তারকাদের পরিচালনা করার জন্যও রাজকেই উপযুক্ত মনে করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। রাজের পক্ষে গিয়েছে আরও একটি বিষয়— রাজনৈতিক দিক দিয়ে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েও বিরোধী শিবিরের তারকাদের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক। ভোটের আগে বিজেপি-র হয়ে দাঁড়ানো শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়দেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন রাজ। যা ইদানীংকালের রাজনীতিতে প্রায় বিরল।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে ব্যারাকপুর থেকে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্লকে হারিয়ে জয়ী হন রাজ। ব্যারাকপুরের গত বারের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত নির্বাচনের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। ওই এলাকার বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ, যাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়, তিনিও একদা তৃণমূলে ছিলেন। ব্যারাকপুরে সবুজায়নের দায়িত্ব রাজকে দিয়েছিলেন মমতা। রাজ তাঁকে হতাশ করেননি। রাজ ওই কেন্দ্রে এতটাই ভাল জনসংযোগ তৈরি করেছিলেন যে মানুষ তাঁর উপরে আস্থা রাখেন। রাজ অবশ্য শুরু থেকেই প্রত্যয়ী ছিলেন নিজের জয় নিয়ে।
শনিবারের রদবদলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হয়েছেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনের সভানেত্রী হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন। সর্বভারতীয় মহিলা সংগঠনের সভানেত্রী হয়েছেন লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। কৃষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। আর দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ।