পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে ধৃতর প্রতীকী চিত্র
সরকারি প্রকল্পের বরাত পাওয়ার টোপ গিলেছিলেন চারাগাছের ব্যবসায়ী। পাঁচতারা হোটেলে চলত বৈঠক। সরকারি আধিকারিকের মুখোশ পরে সেই বৈঠকে হাজির হত প্রতারকেরাই। এ ভাবেই ওই ব্যবসায়ীর থেকে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারকেরা। দু’বছর ধরে খোঁজাখুঁজি করে শুক্রবার ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তিকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার থানা। পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে তার।
অভিযোগকারী ব্যবসায়ী তরুণ দাস বালুরঘাটের বাসিন্দা। তিনি জানাচ্ছেন, সেখানে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ধ্রুবর। তরুণের মেয়েকে কলকাতার নামী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে বলে তাঁর থেকে ধ্রুব ২৫ লক্ষ টাকা নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে পারেনি। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তরুণ সেই টাকা ফেরত চাইলে ধ্রুব কিছু দিন সময় চায়। ইতিমধ্যেই তরুণকে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছে ১৬১ কোটি টাকার গাছ সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেয় সে। আবারও টোপ গেলেন ওই ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানাচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে গল্পের শুরু। কখনও দরপত্র পাইয়ে দেওয়া, কখনও মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির ভাড়া, গাছ গুদামে রাখার ভাড়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নেয় ওই ব্যক্তি। মোট ৬ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়। বেশির ভাগ লেনদেনই অনলাইনে করেছিলেন প্রতারিত ব্যবসায়ী।
ওই ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে ছবি তুলে দেখানো হত প্রকল্পের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘‘গাজিয়াবাদ এলাকার চারাগাছের এক ঠিকাদারকে সামনে রেখে টাকা নেওয়া হয়। আমার পাঠানো দামি গাছ ওই ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে পরে জেনেছি। ওই ঠিকাদার ও আরও কয়েক জনকে পুলিশ-সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক সাজিয়ে দেখানো হয়েছে।’’
২৫ লক্ষ টাকা ফেরত না পেয়েও কী ভাবে ফের বিশ্বাস করলেন ওই ব্যক্তিকে? তরুণের দাবি, ‘‘ভদ্র চেহারা। নিজেকে তৃণমূলের এক দাপুটে নেতার আত্মীয় বলে দাবি করেছিল। মাঝেমধ্যেই বিমানে নিজের খরচেই দিল্লি যাতায়াত করতাম ওকে নিয়ে। পাঁচতারা হোটেলে বৈঠক হত। বুঝিনি যে অফিসার সেজে প্রতারকেরা কথা বলছে।’’
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এক দিন ছ’কোটি টাকার একটি ড্রাফটের ছবিও তরুণকে পাঠায় ধ্রুব। তরুণ বলেন, ‘‘সেই ড্রাফটের বিনিময়ে দু’লক্ষ টাকা কাউকে দিতে হবে বলে চেয়েছিল ধ্রুব। দিয়েও দিই। পরে ড্রাফটের নম্বর মিলিয়ে বুঝতে পারি, সেটি ভুয়ো। তত দিনে বিভিন্ন ভাবে ছ’কোটি খরচ হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের নার্সারি থেকেও ধারে মালপত্র নিয়েছিলাম। এখন প্রচুর দেনা বাজারে।’’