পল্লব হাজারি
অর্থ নয়, অনর্থের মূলে ছিল ত্রিকোণ প্রেম।
দমদমের তরুণ পল্লব হাজারিকে খুনে ধৃতদের টানা জেরায় সেই রহস্য ভেদ করা গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। ওই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল পল্লবের দুই বন্ধু বিশাল যাদব ও সম্রাট নস্করকে। মঙ্গলবার রাতে কার্তিক মোদক নামে বিশালের এক বন্ধুকে ধরে পুলিশ।
জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে, প্রথমে মাথায় আঘাত করে এবং পরে ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে পল্লবকে খুন করে তারা। বুধবার ব্যারাকপুর আদালত ধৃতদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। কাল শুক্রবার ধৃতদের দিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, ত্রিকোণ প্রেমের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য বিশালরা গল্প ফেঁদেছিল, নেশার টাকা না দেওয়ায় তারা পল্লবকে খুন করে। ঘটনার পরের চার দিনে তাদের শান্ত আচরণ অবাক করেছিল তদন্তকারীদের।
বর্ষবরণের রাতে দমদম প্রমোদনগরের বাসিন্দা ১৮ বছরের পল্লবকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় পাড়ারই বন্ধু বিশাল ও সম্রাট। রাতে পল্লব না ফেরায় পরের দিন তাঁর মা চম্পাদেবীকে দমদম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার জন্য নিয়ে যায় দুই বন্ধুই। পরে পল্লবের মোবাইল ঘেঁটে বিশাল এবং সম্রাটকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সময়ে তারা জানিয়েছিল, পার্টিতে মদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পল্লবের কাছে ৮০০ টাকা ছিল। চাওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই টাকা দিতে রাজি হননি। সেই জন্য নেশার ঘোরে পল্লবকে পিটিয়ে মারে ওরা। ঘটনার চার দিন পরে প্রমোদনগরের ভাগাড় থেকে পল্লবের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়।
প্রথম থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল, কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে ধৃত দু’জন। পুলিশ জানিয়েছে, শেষে দু’জনকে আলাদা করে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করায় তারা পুরো ঘটনা স্বীকার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় এক কিশোরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পল্লবের। ওই কিশোরীর সঙ্গে বন্ধুদের পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মাস দুয়েক আগে সে-ও ওই কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে বিশাল। সে কথা পল্লবকে জানিয়ে দেয় মেয়েটি। তার পরেই বিশালের বাড়ি গিয়ে গালিগালাজ করেন পল্লব। তখন বিশাল বাড়িতে ছিল না। তার অভিযোগ, পল্লব তার মা-কে গালিগালাজ করেন। ওই কিশোরী তাকে প্রত্যাখ্যান করায় আগে থেকেই রেগে ছিল বিশাল। পরে তার বাড়িতে চড়াও হওয়ায় পল্লবকে খুনের ছক কষে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, পুরো পরিকল্পনা বিশাল জানায় সম্রাট এবং তার এক বন্ধু কার্তিককে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্টিতে ডাকা হয় পল্লবকে। প্রথমে কাঠ দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। জ্ঞান হারালে ছোট ছুরি দিয়ে পল্লবের গলার নলি কেটে দেয় তিন জন। পরে ইট দিয়ে মুখ থেঁতলে দেয়।