বেলাগাম বাইক ছুটিয়ে মৃত্যু তরুণের

শনিবার ১৮তম জন্মদিনের রাতে বন্ধুর মোটরবাইকে ঘুরতে বেরিয়ে এ ভাবেই দুর্ঘটনায় পড়লেন মুরারিপুকুরের বাসিন্দা মনীষা রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫০
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি। (ইনসেটে) অভিষেক রায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মাঝরাস্তায় পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন এক তরুণ ও এক তরুণী। আশপাশে চাপ চাপ রক্ত! কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। কিছুটা দূরেই ডিভাইডারের রেলিং থেকে ঝুলছে একটি মোটরবাইক। তখনও ইঞ্জিন বন্ধ হয়নি। বাইকটির সামনের অংশ বলতে কিছু নেই!

Advertisement

শনিবার ১৮তম জন্মদিনের রাতে বন্ধুর মোটরবাইকে ঘুরতে বেরিয়ে এ ভাবেই দুর্ঘটনায় পড়লেন মুরারিপুকুরের বাসিন্দা মনীষা রায়। ইএম বাইপাসের বেঙ্গল কেমিক্যাল মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাস্থল থেকে মনীষা এবং তাঁর বন্ধু অভিষেক রায়কে (২১) উদ্ধার করে বাইপাসেরই এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান স্থানীয়েরা। রাতে সেখানেই মারা যান অভিষেক। চিকিৎসকেরা জানান, ওই তরুণ মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাঁর মাথায় গুরুতর চোট লেগেছিল। মনীষার মাথাতেও গুরুতর চোট রয়েছে। কোমর এবং ঘাড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না কাটলে কিছু বলা সম্ভব নয়।

মনীষার মা রীতাদেবী জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এক খুড়তুতো বোনকে নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁর মেয়ে। রাত তিনটে বেজে গেলেও কেউ ফিরছেন না দেখে মনীষার মোবাইলে ফোন করেন তিনি। এক ব্যক্তি ফোন ধরে জানান, মনীষা মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়েছেন। দ্রুত রীতাদেবীদের বাইপাসের ওই হাসপাতালে চলে আসতে বলা হয়। রীতাদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওই অবস্থা। অভিষেককে তো ডাক্তারেরা বাঁচাতেই পারলেন না। মেয়েটা কোনও কথা শোনে না।’’

Advertisement

মনীষার বৌদি মৃত্তিকার দাবি, জন্মদিনের খাওয়া সেরে রাতে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছিলেন না মনীষা। তাঁকে বারবার ফোন করে দেখা করতে বলেন অভিষেকই। শেষে খুড়তুতো বোন বিপাশাকে নিয়ে বেরোন মনীষা। মৃত্তিকা বলেন, ‘‘মাঝে এক বার ফোন করে শুনি, ওই রাতে বাইকে চেপে তিন জন কলকাতা চষে বেড়াচ্ছে। প্রথমে ভূতনাথ মন্দিরে গিয়েছিল। সেখান থেকে লেক টাউনের একটি রেস্তরাঁয় যায়। অভিষেক নাকি রাস্তাতেই মদ্যপান করছিল। ভূতনাথ মন্দিরের কাছে এক বার নাকি পড়তে পড়তে বেঁচেছে। ভয়ে বিপাশা বাইক থেকে নেমে যেতে চায়। ওকে উল্টোডাঙায় নামিয়ে চলে যায় মনীষা আর অভিষেক।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘অত রাতে বিপাশা একা বাড়ির রাস্তা চিনে ফিরতে পারছিল না। দেড় ঘণ্টা উল্টোডাঙার ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে বসেছিল। ফোনে রাস্তা বলে দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতে হয় ওকে। বিপাশা নেমে গিয়েছে শুনে আমার শাশুড়ি মনীষার ফোনে ফোন করেন। পরে বিপাশা সব বলে।’’ মৃত্তিকার অনুমান, বিপাশাকে উল্টোডাঙায় নামিয়ে বাইপাসের দিকে গিয়েছিলেন অভিষেকরা।

দুর্ঘটনাস্থলটি মানিকতলা থানার অন্তর্গত। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, বেলাগাম গতিতে বাইক ছুটিয়ে যাচ্ছিলেন অভিষেকরা। বেঙ্গল কেমিক্যাল মোড়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে বাইকটি। ছিটকে পড়েন দু’জন। পুলিশ মোটরবাইকটি হেফাজতে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে রবিবার দেখা যায়, দুর্ঘটনার জেরে রেলিংয়ের একাংশ কিছুটা দুমড়ে গিয়েছে। সেখানে একটি চটি পড়ে আছে। সেটি অভিষেকের বলে পুলিশের দাবি।

অভিষেকদের বাড়ি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে। বাবা এবং ঠাকুরমার সঙ্গে থাকতেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে কোনও কাজে যোগ দেননি। তাঁর বাবা অমরনাথ রায় বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন বাইকের চাবিটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাল রাতে কী করে সেটা হাতে পেল জানি না। ছেলেটাকে মানুষ করতে পারিনি...!’’

গলা বুঝে আসে অমরনাথবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement