সচেতনতায়: প্লাস্টিকের বিপদ বোঝাতে পোস্টার হাতে জমায়েত। শুক্রবার, ময়দান চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ক্রমশই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। অথচ হুঁশ নেই রাষ্ট্রগুলির। তাই পরিবেশের দিকে প্রশাসনের চোখ ফেরাতে প্রতি শুক্রবার স্কুল বাদ দিয়ে সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে পোস্টার হাতে বসে থাকত বছর পনেরোর গ্রেটা থানবার্গ। ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ নামে সেই আন্দোলন উদ্বুদ্ধ করেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আরও অনেককেই। গ্রেটার উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে শুক্রবার কলকাতায় পথে নামলেন এক দল তরুণী-তরুণী।
গ্রেটার পথ অনুসরণ করে গত কয়েক মাসে সারা বিশ্বের ২৭০টি শহরে প্রায় ২০ হাজার পড়ুয়া ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন। এ দেশে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদে হয়েছে আন্দোলন। পিছিয়ে নেই এ শহরও। পরিবেশ বাঁচাতে ক্ষতিকর প্লাস্টিক বর্জনের বার্তা নিয়ে হাতে পোস্টার এবং মুখ প্লাস্টিকে ঢেকে এ দিন ময়দান চত্বরে প্রচারে শামিল হলেন জনা কুড়ি পরিবেশপ্রেমী তরুণ-তরুণী। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে লেখিকা জয়া মিত্র বলছেন, ‘‘পরিবেশের জন্য নবীন প্রজন্ম যত বেশি করে এগিয়ে আসবে, ততই মঙ্গল।’’
কেন প্লাস্টিক? সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, আসানসোলের দূর্বা মিত্রের সঙ্গে এ দেশের ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ গ্রুপের পরিচয় হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরিবেশ প্রেম থেকেই এই আন্দোলনের শরিক হয়েছেন। বলছেন, ‘‘আজ আমাদের সব কিছুতেই প্লাস্টিক, যা চাইলেও নষ্ট করা অসম্ভব। অনেক প্লাস্টিক বহুবার ব্যবহার করা হয় না। অথচ এ রাজ্যে প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিকাঠামো সে ভাবে নেই। তাই ক্রমশ নিজেরাই পরিবেশ দূষিত করে চলেছি। সেটাই মানুষকে বোঝাতে চাই।’’
পরিবেশের জন্য কিছু করার তাগিদই ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ আন্দোলন মিলিয়ে দিয়েছে ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার আলতাব হুসেন, ব্যাঙ্ককর্মী সৌম্য রায়, হেরিটেজ কলেজের ছাত্রী প্রেরণা রায়-সহ আরও অনেককে। এ দিন প্রচারের ফাঁকে তাঁরাই মনে করাচ্ছেন প্লাস্টিকের কু-প্রভাবের কথা। প্রেরণার কথায়, ‘‘অসমের বন্যা কিন্তু অনেকটাই মনুষ্যসৃষ্ট, আর তা ঘটছে প্লাস্টিকের সৌজন্যে। মাটিতে মিশে একটি আস্তরণ তৈরি করে প্লাস্টিক, ফলে ভূগর্ভে জল ঢুকতে পারে না। চেন্নাই-হায়দরাবাদে পানীয় জলের সমস্যা কিন্তু এরই ফল।’’
গত জুনে প্রথম এ শহরের বুকে পৌঁছেছিল ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ আন্দোলন। যাদবপুর এলাকায় বায়ুদূষণ নিয়ে জোরদার প্রচার চালিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ দিনের প্রচারের ‘থিম’ অবশ্য ছিল প্লাস্টিক। আলতাব-সৌম্যদের ব্যাখ্যা, খুব ছোট ছোট কিছু নিয়ম মানলেই আস্তে আস্তে প্লাস্টিক বাদ দেওয়া সম্ভব। যেমন স্টিলের গ্লাস, চামচ-কাঁটাচামচ ব্যাগে রাখলে সহজেই প্লাস্টিকের গ্লাস-চামচের ব্যবহার এড়ানো যায়। বাজার করতে ব্যবহার করা যায় কাপড়ের ব্যাগ। স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে মেনস্ট্রুয়েশন কাপের ব্যবহার অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।
শহরবাসীকে ভাবাতে আন্দোলনকারীরা এ দিন ভরসা রেখেছেন ল্যাপটপেও। মেরু অঞ্চলে ঠাঁইহারা শ্বেতভল্লুক থেকে কাজিরাঙার বন্যাদুর্গত বন্যপ্রাণ, সামুদ্রিক মরা মাছের পেটে প্লাস্টিকের টুকরোর ছবি ও ভিডিয়ো দেখিয়ে পথচলতি শহরবাসীকে তাঁরা আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন—‘আমাদের সুবিধার খেসারত দিচ্ছে পৃথিবী’।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।