—ফাইল চিত্র।
সরকারি যে স্কুলগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীরা একসঙ্গে পড়ে না, সেই সব স্কুলের ক্ষেত্রে দিবা বিভাগে এত দিন ছেলেদের স্কুলে শিক্ষিকা বা মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটল। শহরের দুই শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— হিন্দু স্কুল এবং হেয়ার স্কুলের দিবা বিভাগে এ বার শিক্ষিকা নিযুক্ত হচ্ছেন। ওই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, তাঁরা জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা নিযুক্ত হওয়ার চিঠি পেয়েছেন।
হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘কমিশনার অব স্কুল এডুকেশন অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস চিঠি দিয়ে আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। সোমবারই সেই চিঠি পেয়েছি। ১৫ দিনের মধ্যে ওই শিক্ষিকা আমাদের স্কুলে যোগ দেবেন। শতাব্দী পার করা এই সরকারি স্কুলে দিবা বিভাগে এক জন শিক্ষিকার যোগ দেওয়া নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম। ওই শিক্ষিকার এটি প্রথম স্কুলে চাকরি।’’ হেয়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের দিবা বিভাগে এত দিন কোনও শিক্ষিকা ছিলেন না। যিনি শিক্ষকতা করতে আসছেন, তিনি জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা।
সরকারি স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন ওই দুই স্কুলের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। অনেকেরই প্রশ্ন, শিক্ষিকা নিয়োগের মাধ্যমে এই সরকারি স্কুলগুলিকে কি ধীরে ধীরে কো-এডুকেশনাল স্কুলের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা দফতরের? কিছু শিক্ষকের মতে, তেমন পরিকল্পনা থাকলে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, এমনিতেই এখন সরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। স্কুলগুলিও অনেকটা বিবর্ণ। তাদের হৃত গৌরব ফেরাতে নানা ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষকদের বক্তব্য, ছেলে এবং মেয়েরা একসঙ্গে পড়ার সুযোগ পেলে পড়ুয়া সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনই বিস্তৃত হবে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। উন্নত হবে পড়াশোনার পরিবেশ। অনেকে এ-ও মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কাছে এই ঐতিহ্যশালী স্কুলগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে পারে।
তবে শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ করতে গিয়ে যাতে পুরুষ শিক্ষকের পদ বাতিল না হয়, সেটাও দেখা প্রয়োজন। প্রণববাবু জানান, তাঁদের স্কুলে বেশ কিছু বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। তাই যে পদেই হোক না কেন, ওই শিক্ষিকার নিয়োগ খুব জরুরি ছিল।
অন্য দিকে শুভ্রজিৎবাবু জানান, শিক্ষিকা নিয়োগ হলেও এখনও তাঁদের স্কুলে শিক্ষিকাদের কাজ করার মতো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। যেমন, ওই স্কুলে মহিলাদের পৃথক শৌচাগার বা বসার জন্য আলাদা ঘর নেই। তা ছাড়া, যে সব জায়গায় পুরুষ ও মহিলারা একসঙ্গে কাজ করেন, সেই সব ক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা রুখতে বিশাখা গাইডলাইন মেনে কাজ করতে হয়। ওই গাইডলাইনের বিষয়ে এখনও কেউ আলোকপাত করেননি। তবে শুভ্রজিৎবাবু জানান, তাঁরা পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আপাতত মহিলাদের একটি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হবে।