সেই অর্ধসমাপ্ত শৌচাগার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রাতে খুব প্রয়োজন হলে প্রতিবেশীদের সাহায্য মেলে। বাকি সময়টা গণ শৌচালয়ই ভরসা। দেড় বছর এ ভাবে লড়াইয়ের পরে শেষে বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের অনুমতি পেয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। তাতেও অবশ্য সমস্যা মেটেনি। কারণ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই এখন শৌচালয় তৈরিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ নিয়ে মানিকতলা থানার দ্বারস্থ হতে হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মুরারিপুকুর রোডের ১৭/২ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন মাধবী মুখোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধা। স্বামীর মৃত্যুর পরে এখন তাঁর সঙ্গেই থাকেন মেয়ে-জামাই এবং কলেজ পড়ুয়া নাতি। ২০১৬ সালে বাড়িটি প্রোমোটারকে বিক্রি করে দেন মালিক। বাকি ছয় ভাড়াটের সঙ্গে প্রোমোটারের রফা হলেও মাধবীদেবীদের সঙ্গে হয়নি। নির্মাণের জন্য ভেঙে প্রায় মাঠ করে ফেলা ওই বাড়িতেই থাকছিলেন মাধবীদেবীরা। সমস্যা হয় শৌচকর্ম নিয়ে। বাড়ির একমাত্র শৌচালয়ও ভেঙে ফেলেন প্রোমোটার।
মাধবীদেবী বলেন, ‘‘থানায় বহু ঘুরেছি। শৌচালয় না থাকার সমস্যা, আমরা বুঝে গিয়েছি। চলতি মাসের ৮ তারিখ শিয়ালদহ আদালত শৌচালয় তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।’’ রায়ে আদালত বলেছিল, ওই দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে ওই ঠিকানায় শৌচালয় তৈরি করে দিতে হবে বাড়ির বর্তমান মালিককে। তা না হলে মাধবীদেবীরা নিজেই শৌচালয় তৈরি করাবেন। এমনকি বলা হয়েছিল, খরচের হিসেব জমা করলে আদালত টাকা পাইয়ে দেবে। মাধবীদেবীর দাবি, ‘‘রায় বেরোনোর পরে ১০ দিন অপেক্ষা করেছি। মালিক বা প্রোমোটারের কেউই শৌচালয় তৈরি করে দেননি। শেষে আমরাই মিস্ত্রি আনিয়ে যখন কাজ করাতে শুরু করি, তখন উল্টে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কাউন্সিলরের লোক এসে আমাদের দেখা করতে বলে।’’ তাঁর অভিযোগ, কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে আদালতের নির্দেশ দেখালেও বরো অফিসে গিয়ে অনুমতি আনতে বলা হয়। সেখানে গেলে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে যেতে বলা হয়। সেখানেও দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রেখে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে মানিকতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মাধবীদেবীরা।
এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা কাজ করতে বাধা দিইনি। বাড়ির যে কোনও কাজ করাতে গেলে পুরসভাকে জানিয়ে রাখতে হয়! সেটাই বলেছিলাম ওঁকে।’’ মাধবীদেবীর মেয়ে মিঠু বললেন, ‘‘পুরসভায় গেলে সেখান থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ রয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারি না।’’ তবু কাজ হচ্ছে না কেন? মিঠুর দাবি, ‘‘প্রোমোটারই এখন ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করিয়ে দিচ্ছে। পুরসভায় গিয়ে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ করছে।’’
প্রোমোটার গৌতম সোমচৌধুরী অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘আদালত বলেছে, শৌচালয় নির্মাণ করতে। তবে তা কোথায় এবং কতটা জায়গা নিয়ে, তা বলেনি। ওই বাড়ির মালিক আমি। জমিতে যেখানে খুশি শৌচালয় করতে দেব না। সেটাই পুরসভাকে জানিয়েছি।’’
শৌচালয়ের সমস্যা মেটাতে পুর প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেও উত্তর পাচ্ছেন না বৃদ্ধা।