ঘটনাস্থল: এই রেলিংটি (চিহ্নিত) ছুঁয়ে ফেলাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন শাহিদা বিবি ও তাঁর সন্তান। বৃহস্পতিবার, হেস্টিংস মোড়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা তরুণীর দেহ বাঁশ দিয়ে সোজা করতেই চমকে উঠেছিলেন সবাই। তখনও তরুণীর কোলে ওড়না দিয়ে বাঁধা এক ছোট্ট শিশু। তাকে জাপটে ধরে তরুণীর একটি হাত। তবে দু’জনের শরীরই তত ক্ষণে নিথর হয়ে গিয়েছে।
বিদ্যাসাগর সেতুর যে র্যাম্পটি হেস্টিংস মোড়ে এসে মিশেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানেই ঘটনাটি ঘটেছে। বাতিস্তম্ভের ছেঁড়া বিদ্যুতের তার রাস্তার ডিভাইডারের লোহার রেলিং ছুঁয়ে ছিল। আর বৃষ্টিভেজা সেই রেলিংয়ে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় মা ও তাঁর দু’মাসের শিশুকন্যার। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর নাম শাহিদা বিবি (২১)। সেতুর র্যাম্পের নীচে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। প্রতিদিনের মতো এ দিনও তিনি দু’মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে বেরিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার উপরেই শাহিদাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। বিষয়টি তাঁরা জানান বিদ্যাসাগর ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীদের। স্থানীয় কয়েক জন যুবক ও পুলিশকর্মীরা মিলে সামনে গিয়ে দেখেন লোহার রেলিং ছুঁয়ে রয়েছে বিদ্যুতের একটি কাটা তার। সকলের সন্দেহ হয়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। কিন্তু তখনও কেউ বুঝতে পারেননি শাহিদার কোলেই রয়েছে তাঁর সন্তান।
খবর পেয়ে বিদ্যাসাগর ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ অফিসারেরা ঘটনাস্থলে যান। বাঁশ দিয়ে তরুণীকে টেনে সোজা করতেই দেখা যায় শিশুটিকে। খবর পেয়ে হেস্টিংস থানার পুলিশ এসে অচৈতন্য অবস্থায় দু’জনকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মা ও মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরে স্থানীয়েরা ও পুলিশ মিলেই ওই কাটা তারের দু’টি মুখ টেপ দিয়ে মুড়ে দেন, যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, রাস্তা পার হওয়ার সময়ে জলের উপরে পা রেখে কোনও ভাবে ওই রেলিংটি ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ওই তরুণী। তাতেই তিনি ও শিশুটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিগন্যাল পোস্টে লাগানো গ্লোসাইন বোর্ড থেকে তখনও রেলিংয়ের উপরে ঝুলছে তারটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে ওই তারটি ছিঁড়ে যায়। তার পরে কেউ সেটি লোহার রেলিংয়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন হল এত ব্যস্ত একটি রাস্তার উপরে এমন বিপজ্জনক ভাবে কাটা তার ফেলে রাখা হল কেন? কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের কোনও তার নেই। ওটা সিইএসসি-র তার। সকালে সিইএসসি ওখানে কাজ করেছিল বলে শুনেছি।’’ তবে সিইএসসি-র এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘জল বিদ্যুদয়িত হয়েছে বলে দুপুরে একটি খবর আমাদের কন্ট্রোল রুমে আসে। কর্মীরা সেখানে গিয়েও তেমন কিছু পাননি। তবে ওই
এলাকায় আমাদের প্রায় সব তারই মাটির নীচে রয়েছে।’’
দায়িত্বের এই চাপাউতোরে শাহিদার মা নূরজাহান বিবির প্রশ্ন, ‘‘আমার মেয়ে ও নাতনির মৃত্যুর
দায় কার?’’