ধর্মতলায় একটি বাতিস্তম্ভ থেকে বেরিয়ে রয়েছে তার। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
ঝড়-বৃষ্টির সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন চাকরিতে সদ্য যোগ দেওয়া এক যুবক। রাজভবনের সামনের জল থইথই ফুটপাত ধরে আসার পথে বাতিস্তম্ভের সংস্পর্শে এসে জলে পড়ে যান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত হেয়ার স্ট্রিট থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও মৃত্যু হয় ঋষভ মণ্ডল নামে বছর পঁচিশের সেই যুবকের।
গত বছর বর্ষা আসার আগে মে-র মাঝামাঝি এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। বাতিস্তম্ভ থেকে বেরোনো বিদ্যুতের খোলা তারের সংস্পর্শে এসেই ঋষভ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন বলে জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেই ঘটনার পরে বিতর্ক কম হয়নি। বাতিস্তম্ভ রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে গাফিলতি নিয়ে কলকাতা পুরসভা ও সিইএসসি-র মধ্যে চলে দায় ঠেলাঠেলিও। রাজভবন সংলগ্ন রাস্তা-সহ শহরের কয়েকটি এলাকার বাতিস্তম্ভের খোলা অংশ ঢাকতে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি, বাতিস্তম্ভের খোলা অংশ নাগালের বাইরে তুলে দিতেও দেখা যায়।
কিন্তু বছর ঘুরতেই বহু রাস্তায় পুরনো ছবিই দেখা যাচ্ছে। নাগরিকদের অভিজ্ঞতা বলছে, রবীন্দ্র সরণি, মানিকতলা রোড, ক্যানাল ইস্ট রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সংলগ্ন রাস্তার পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে বাতিস্তম্ভের খোলা তার। কোথাও বিপজ্জনক ভাবে খোলা ঢাকনা, কোনও বাতিস্তম্ভে ঢাকনাই নেই। ভবানীপুর, টালিগঞ্জ-সহ কিছু এলাকায় আবার বাতিস্তম্ভের খোলা অংশে প্লাস্টিক বা ব্ল্যাক টেপ জড়িয়ে জোড়াতালি দিতেও দেখা গিয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দিনকয়েকের মধ্যেই শহরে বর্ষা ঢুকবে। এ দিকে, গত কয়েক বছরে শহরে জল জমার প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও তারও বেশি জল জমে যায়। ফলে এই বর্ষাতেও যদি জমা জল আর বাতিস্তম্ভের খোলা অংশের জেরে বিপদ ঘটে? প্রশ্নটা অনেকেরই। ভবানীপুরের বাসিন্দা নীলরতন বিশ্বাস বললেন, ‘‘জল জমলে নজরে পড়ে না কোন বাতিস্তম্ভের ঢাকনা খোলা, আর কোনটা ঢাকা। ফলে বিপজ্জনক এই পরিস্থিতির কারণেই জলমগ্ন কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার বিপদ থেকেই যায়।’’
সিইএসসি-র এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘বাতিস্তম্ভের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিইএসসি-র নয়। শহরের অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুতের তার ভূগর্ভস্থ। তা রক্ষণাবেক্ষণ করে সিইএসসি। কিন্তু বাতিস্তম্ভ যারা লাগায়, রক্ষণাবেক্ষণ তারাই করে।’’
পুরসভার দাবি, ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন বাতিস্তম্ভের খোলা অংশ ঢাকার কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি, সেগুলি থেকে চেন এলইডি-ও খুলে নেওয়া হয়েছে। জল জমলে ত্রিফলা আলো থেকেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণে সেগুলিকেও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী বলেন, ‘‘গত বছর রাজভবনের ঘটনার পর থেকেই বাতিস্তম্ভের খোলা অংশ ঢাকার কাজ শুরু হয়েছিল। বহু জায়গায় সেই কাজ শেষ হয়েছে। তবে অলিগলিতে বাকি থাকতে পারে। বর্ষার আগেই সব কাজ শেষ হবে। ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমি কথা বলব।’’