আলোক-পথে। রবিবার, শীতের শহরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইনিংসের গোড়ায় টলমল করছিল সে। নিম্নচাপ বা ঘুর্ণাবর্তের বাউন্সারে বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষে এসে ক্রমশই পিচে থিতু হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে শীত! তবে তার ব্যাটে মারকাটারি দাপট কবে মিলবে, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না আবহবিদেরা।
শীত থিতু হওয়ায় রং বেড়েছে শহরের পথেও। সকাল থেকেই লোকের গায়ে চেপে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে বাহারি সোয়েটার, চাদর, জ্যাকেট। সন্ধ্যার পর থেকে কানে-মাথায় উত্তুরে হাওয়ার ধাক্কা সামলাতে অনেকেই জড়িয়ে নিয়েছেন রংবাহারি টুপি, মাফলার। ছুটির দিনে সকাল থেকে অনেকেই নরম রোদে পিঠ দিয়ে আড্ডা জমিয়েছেন।
দিনে ঠান্ডা-রাতে গুমোটের আবহাওয়া কাটিয়ে শনিবারই মহানগরে জাঁকিয়ে বসেছিল উত্তুরে হাওয়া। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক লাফে ৫ ডিগ্রি নেমে এসে দাঁড়িয়েছিল ১৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি কম। রবিবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও স্বাভাবিকের চৌকাঠ পেরোয়নি।
আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, গত কয়েক দিন যে ভাবে পারদ ওঠানামা করেছিল, তাতে শীতের ভবিষ্যৎ নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধছিল। ‘‘বছরের শেষে এসে পারদ থিতু হওয়ায় নিজের ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে শীত,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর। তাঁর ব্যাখ্যা, তাপমাত্রার ১ ডিগ্রি ওঠানামা প্রকৃতির নিজের ছন্দের মধ্যেই পড়ে। ফলে শনিবারের তুলনায় এ দিন যেটুকু বেড়েছে, তা অস্বাভাবিক নয়।
আরও খবর:
ময়দানি মজা কি মাঠেই মারা যাবে
সঙ্গী ঘূর্ণাবর্ত, খামখেয়ালি ব্যাটিং শীতের
শীত ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিতেই মুখের হাসি চওড়া হয়েছে মহানগরে হাজির হওয়া মরসুমি শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীদেরও। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই ওয়েলিংটন স্কোয়ারে শীতের পোশাক নিয়ে হাজির হন ভুটিয়ারা। তাঁদের অনেকেই বলছেন, শীত জাঁকিয়ে না পড়ায় ডিসেম্বরের গোড়া থেকে তেমন খদ্দের মিলছিল না। বাহারি উলের টুপি, কার্ডিগান ঝুলিয়ে রাখলেও নজর কাড়ছিল না লোকজনের। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই খদ্দেরের ভিড় বেড়েছে। কনকনে হাওয়া ঠেকাতে অনেকেই কানঢাকা টুপি বা মাফলারের খোঁজ করেছেন বেশ কয়েকটি দোকানে।
আবহবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের ঠেলায় দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ জমছিল। তাতে যেমন দিনের বেলা তাপমাত্রা বাড়তে পারছিল না, তেমনই থমকে গিয়েছিল উত্তুরে হাওয়ার গতিও। দিনের বেলা চড়া রোদ উঠলে মাটি গরম হবে এবং রাতের বেলা সেই তাপ মেঘহীন আকাশে বিকিরিত হয়ে দ্রুত ঠান্ডা হবে, এটাই শীতের আসল চরিত্র। এর পথে বাধা পড়লেই এলোমেলো হয়ে যায় শীতের ছন্দ।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কলকাতায় শীতের দাপট মারকাটারি না হলেও দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে জাঁকিয়ে শীত পড়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া, শ্রীনিকেতন, আসানসোলের মতো জায়গায় রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের বেশ কিছু জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। জেলাগুলিতে আরও দু’-এক দিন এমন পরিস্থিতি চলবে বলেই মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
আর কলকাতায় শীতের ভবিষ্যৎ কী?
আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, মহানগরে এখনই ফের শীতের ছন্দপতনের আশঙ্কা নেই। তা বলে দিন কয়েকের মধ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়বে, তেমন সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘টি-টোয়েন্টি নয়, বরং বর্ষশেষে শীত টেস্ট ম্যাচ খেলেই কাটাবে।’’