স্বাধীনতা দিবসই হোক বা কালীপুজো, ছটপুজো। অভিযোগ, রাস্তা আটকে মঞ্চ গড়ে, আবাসনে অথবা পাড়ার মাঠে ডিজে বক্সের শব্দ-তাণ্ডব ছিল বছরভর। প্রতিমা বিসর্জনেও কিছু রাস্তায় ডিজে বেজেছে অবাধে। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করে লাভ হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে নতুন বছর কি শব্দদানবের হাত থেকে মুক্তি পাবে? না কি একই ভাবে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থকে তোয়াক্কা না করেই চড়বে ডেসিবেল? ডিজে বক্স বাজিয়েই হবে জলসা? ফাটবে শব্দবাজিও?
শব্দদানবের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা রাখছেন খুব কম মানুষই। রাত জেগে বর্ষবরণের জলসার প্রস্তুতি দেখে আতঙ্কিত অনেকেই। শহরবাসীর একাংশের মতে, সকালবেলার আবহাওয়া দেখলে অনেকটা বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। এ ক্ষেত্রেও যেন তেমনই আশঙ্কা। বর্ষবরণই যেখানে হচ্ছে ডিজে-র তাণ্ডব দিয়ে, সেখানে আর কী বা আশা রাখা যায়? সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কেউ প্রতিবাদ করলেই তো উল্টে বাড়িতে চড়াও হবে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ প্রশাসনকে বলেও অনেক সময়েই সুরাহা হয় না। অভিযুক্তেরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
ডিজে বক্স বাজানো বিরুদ্ধে কথা বলে কিংবা শব্দবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে, প্রতিবাদীদের মার খাওয়ার ঘটনা একাধিক বার ঘটেছে এই শহরে। বছর কয়েক আগে রাত জেগে ডিজে বক্স বাজানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা বাচিকশিল্পী পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ। ভাঙচুর চালানো হয় তাঁদের বাড়িতে। অন্য দিকে চলতি বছরই কালীপুজোতে শব্দবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল রিজেন্ট পার্কের একটি পরিবার। অভিযোগ, ওই পরিবারের ক্যানসার আক্রান্ত এক ব্যক্তিকেও শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। শহরবাসীর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ থেকে বিখ্যাত, কাউকেই ছাড়া হয় না। কোন সাহসে প্রতিবাদ করবেন তবে?
পরিবেশ দফতরের নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে বর্ষবরণই হোক বা যে কোনও উৎসব, শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা একই থাকবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘ডিজে বক্স পুরোপুরি নিষিদ্ধ। শব্দবাজি ফাটানোর নির্দেশিকাও সারা বছর একই থাকে। আমাদের ওয়েবসাইটে তা দেওয়াও আছে।’’ তবে পরিবেশকর্মী নব দত্তের বক্তব্য, তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ২০১৮ সালে বছরভর ডিজে বক্স বাজানো নিয়ে থানায় ও লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না। নতুন বছরে আমরা এই নিয়ে আরও তীব্র আন্দোলনে নামব।’’ লালবাজারের এক পুলিশকর্তার অবশ্য দাবি, শব্দবাজিই হোক বা ডিজে বক্স, অভিযোগ দায়ের হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ডিজে বক্স বাজানোর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কলকাতার এক বাসিন্দা পরিচয় গোপন রেখে থানায় অভিযোগ করতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ রকম উদাহরণ অনেক আছে। তবে শুধু পুলিশ উদ্যোগী হলেই চলবে না। শহরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।
কিন্তু কাবু হবে কি শব্দদানব? একটু স্বস্তি পাবে শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, অসুস্থ মানুষ ও পোষ্যেরা? উল্টোডাঙার দাসপাড়ার বাসিন্দা শুভাশিস ঘোষের মতে, ‘‘সারা বছর ধরেই নানা উৎসবের অজুহাতে পাড়ায় ডিজে বক্স বাজছে। রাতভর শব্দবাজির তাণ্ডব চলে। বাড়িতে বয়স্ক মা হার্টের রোগী। শব্দ কম করতে বললে গালিগালাজ জুটছে। তাই পাল্টানোর ভরসা আর করি কী ভাবে? নতুন বছরে ভাবছি উৎসবের সময়ে মাকে নিয়ে কোথাও চলে যাব।’’
এ শহরেরই ডিজে ত্বিষা ঘোষ ক্লাব, হোটেলের পাশাপাশি পাড়ায় এবং অবাসনেও অনুষ্ঠান করেন। তাঁর দাবি, ‘‘কেউ আওয়াজ কমাতে বললে সঙ্গে সঙ্গেই কমিয়ে দেওয়া হয়। কেউ অসুস্থ আছেন জানলে নিজেরাই শব্দের মাত্রা কমিয়ে দিই। নতুন বছরেও এই অভ্যাসটা বজায় থাকবে।’’