লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো— দু’টি ক্ষেত্রেই দূরত্ব-বিধি মানা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফাইল চিত্র।
রেল মন্ত্রকের তরফে এখনও সরকারি ভাবে কোনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি। তবে এ রাজ্যে মেট্রো এবং লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে বুধবারই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, দূরত্ব-বিধি মেনে চললে ওই দুই পরিষেবা চালু হতে পারে। রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই। তবে সেই দূরত্ব-বিধি মানা বাস্তবে কতটা সম্ভব হবে, এ দিন অবশ্য সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে রাজ্যে মেট্রো এবং লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। রেল এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সরকারি নির্দেশ এলে তবেই পরিষেবা শুরু হবে। তবে লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো— দু’টি ক্ষেত্রেই দূরত্ব-বিধি মানা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মেট্রো সূত্রের খবর, পরিষেবা শুরু করতে তারা প্রস্তুত। ‘আনলক-৪’ পর্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মেট্রো চলাচলের অনুমোদন দিতে পারে বলে খবর। কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘এখনও রেল মন্ত্রক থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। নির্দেশ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’ মেট্রো কর্তৃপক্ষ আপাতত সেই নির্দেশিকা জারি হওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নির্দেশিকা এলে সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে।
পরিষেবা শুরু করার ছাড়পত্র মিললে রাজ্যের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। তবে করোনা আবহে দূরত্ব-বিধি মেনে কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ করতে গেলে মেট্রোয় ট্রেনের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে যেতে পারে বলেই মনে করছেন কর্তারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যের সহযোগিতা চাইতে পারেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল প্রযুক্তি বা অ্যাপ ব্যবহার করে মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। যদিও মেট্রোকর্মীদের একাংশের মতে, দিনের ব্যস্ত সময়ে, বিশেষত সকাল ও সন্ধ্যায় ওই প্রযুক্তি কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে ভিড় কমানো গেলেও স্টেশন চত্বরে বা প্রবেশপথে ভিড় জমতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
আরও পড়ুন: করোনা চিকিৎসায় প্লাজ়মা দিতে কাটছে না সংশয়
মেট্রোকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়লে পরিষেবা যে অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে, সেটাও মাথায় রাখছেন কর্তারা। বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়ে পরিষেবা শুরু করলেও আবার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে করোনা আবহে দৈনিক যাত্রী-সংখ্যা কত হতে পারে, তা আঁচ করতে পারছেন না মেট্রোকর্তারা। পরিষেবা শুরু হলে অনেকেই বাস ছেড়ে মেট্রোয় যাতায়াত করতে পারেন। তাতে ভিড় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতত তাই কিছুটা বিধিনিষেধ রেখেই পরিষেবা শুরু করার পক্ষপাতী মেট্রোকর্তাদের একাংশ।
সেপ্টেম্বর থেকে লোকাল ট্রেন চালু হওয়া নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছে। এ দিন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ম্যানেজার শীলেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ জানান, রেলের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে পরিষেবা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। করোনা আবহে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রতিটি স্টেশনে নির্দিষ্ট পথ দিয়েই যাত্রীদের প্রবেশের ব্যবস্থা হচ্ছে। টিকিট ছাড়া কাউকেই প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: মমতার ঘোষণায় শুরু তৎপরতা, তবু অনিশ্চিত কর্ড ব্লাড থেরাপি
ওই রেলকর্তা জানান, প্ল্যাটফর্মে আপাতত হকারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাত্রীদের প্রবেশপথ নির্দিষ্ট করতে বেশ কিছু স্টেশনে পাঁচিল তোলার কাজও করছে রেল। প্রতিটি স্টেশনেই ঢোকার আগে যাত্রীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ারের স্টলও থাকবে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষার পরে স্টেশনে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। যে সমস্ত স্টেশনে খুব বেশি ভিড় হয়, সেগুলিকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে আনছে রেল। আরপিএফ কর্মীরা ওই নজরদারি চালাবেন। কোথাও কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। সমন্বয় বাড়াতে আধিকারিক পর্যায়ে রেল পুলিশের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে বলে জানান শিয়ালদহের ডিআরএম। লোকাল ট্রেনে মহিলা কামরায় নজরদারি বাড়াতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টারের সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে বলে রেল সূত্রের খবর।