প্রধান বিচারপতি যখন আইনজীবী সিংহের পরনে কেন গাউন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তখন তড়িঘড়ি গাউন পরে বসে পড়েন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল।
আইনজীবীর গাউন না পরে শুনানিতে অংশ নেওয়ায় কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়লেন সিআইএসএফের আইনজীবী ডিপি সিংহ। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বিরক্তিপ্রকাশ দেখে তড়িঘড়ি কালো কোট চাপিয়ে নিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এমভি রাজুও।
সোমবার ছিল ২০২১ সালের ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় শুনানি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবীরা। সবে সওয়াল শুরু হবে, এমন সময়ে আইনজীবী সিংহের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনি গাউন না পরেই শুনানি করছেন? কেন জানতে পারি?’’ প্রশ্নে অল্প সময়ের জন্য থমকে যান ওই আইনজীবী। তার পর জানান, ভার্চুয়াল মাধ্যমে রয়েছেন। তাই গাউন পরেননি। যদিও পাল্টা প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘ভার্চুয়াল মাধ্যমে কোর্ট চলছে মানে এটাও তো আদালতের প্রক্রিয়া! এখানেও তো গাউন পরা উচিত।’’ আইনজীবী সিংহ যুক্তি দেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিলে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে গাউন পরতে হয় না। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে (সুপ্রিম কোর্টে) অনুমতি দেওয়া হয়। সেই কারণে এখানেও অংশ নিই। দুঃখিত ধর্মাবতার!’’
উল্লেখ্য, দেশে করোনা পরিস্থিতির সময় একটি বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না। গত বছর করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আদালত কক্ষে সওয়াল জবাবের সময় আইনজীবীদের গাউন পরে আসতে হবে বলে জানায় কলকাতা হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি যখন আইনজীবী সিংহের পরনে কেন গাউন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তখন তড়িঘড়ি উঠে গিয়ে গাউন পরে বসে পড়েন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। তাঁর পরনেও গাউন ছিল না। তবে তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানি হলে আইনজীবীদের গাউন পরতে হয় না। যা শুনে প্রধান বিচারপতি শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ঠিক আছে আপনারা বলুন। আমি শুধু নিয়মটা বললাম।’’
আদালতে কালো কোট, কালো গাউন পরার রেওয়াজ সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। এক সময় ইংল্যান্ডের আদালতে বিচারপতি, আইনজীবীরা কালো রঙের কোট পরতেন। তবে গাউনের রং বিভিন্ন ছিল। ১৬৬৫ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের মৃত্যুর পর আদালতে আইনজীবী এবং বিচারপতিরা কালো কোট এবং কালো গাউন পরা শুরু করেন। শোকপ্রকাশের জন্য ছিল এই ‘ড্রেস কোড’। পরে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় মেরির মত্যুর পরও আদালতে টানা কালো কোট এবং গাউন পরে আসতেন আইনজীবী এবং বিচারপতিরা। পরবর্তী কালে ইংরেজরা যে সব দেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সেখানেই এই রীতি চালু হয়েছে।