প্রধান শিক্ষকদের অনেকেরই মতে, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবসরের পরেই পেনশন চালু হওয়া নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। প্রতীকী ছবি
সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের পেনশন পেতে দেরি হয় কেন? কারণ জানতে তদন্তের দাবি তুললেন প্রধান শিক্ষকদেরই একাংশ।
হেয়ার স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুনীল দাসের অবসরের পরে ভিজিল্যান্স গঠন করা হয়েছিল। তাই অবসরের পরেই তাঁর পেনশন চালু হয়নি। বুধবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে সুনীলের বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এর পরেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, সেই ভিজিল্যান্স সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পরেই সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একটি অংশের দাবি, ভিজিল্যান্স কেন হয়েছিল, তা জানতে যে কমিটি তদন্ত করছে, বরং তারাই দেখুক, বেশির ভাগ প্রধান শিক্ষকের পেনশন পেতে কেন দেরি হয়। শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ওই প্রধান শিক্ষককে আপৎকালীন পেনশন দেওয়া হচ্ছিল।
রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অনেকেরই মতে, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবসরের পরেই পেনশন চালু হওয়া নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। কারণ, তাঁদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা কয়েক দিনের মধ্যেই কাগজপত্র তৈরি করে পেনশনের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেন। অন্য দিকে, প্রধান শিক্ষকদের পেনশনের অনুমোদন পেতে কাগজ যায় বিকাশ ভবনে।
‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, ‘‘বিকাশ ভবনের দীর্ঘসূত্রতায় পেনশন পেতে এই বিলম্ব হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিজিল্যান্স গঠিত হলে তাঁর পেনশন চালু হতে আরও দেরি হয়। যেমনটা হল সুনীলের ক্ষেত্রে।’’আরও অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের উপরে স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ক্ষোভ থাকলে তাঁকে কোণঠাসা করতে বিকাশ ভবনে অভিযোগ ঠুকে দেওয়ার রেওয়াজও পুরনো। তবে এ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ বিকাশ ভবনের কর্তারা।
প্রধান শিক্ষকদের একটি অংশের দাবি, সুনীলের বিরুদ্ধে যে ভিজিল্যান্স গঠিত হয়েছিল, তার যৌক্তিকতা নিয়ে তদন্ত হলে অনেক অজানা তথ্য সামনে আসবে। তাঁদের মতে, সুনীল হেয়ার স্কুলকে নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে চালাতে ও শিক্ষকদের টিউশন নেওয়া বন্ধে সচেষ্ট ছিলেন। এই প্রসঙ্গে স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগতের মতে, ‘‘সুনীলবাবুর স্কুল চালানোয় সুনাম ছিল। নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিলেন। সৎ শিক্ষক ও প্রশাসক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তারই ফলস্বরূপ অবসরের কিছু দিন আগে ‘শিক্ষারত্ন’ পান।’’
শিক্ষক সংগঠনগুলির মতে, অবসরের পরে দিনের পর দিন পেনশনের জন্য বিকাশ ভবনের দরজায় ঘুরেছেন। বিনিময়ে জুটেছে অপমান এবং ভিজিল্যান্সের নামে অবমাননা। প্রধান শিক্ষকদের দাবি, সরকার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। সুনীলের পরিবারকে তাঁর প্রাপ্য অর্থ দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি তদন্ত করে দেখা হোক, সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কেন পেনশন পেতে দেরি হচ্ছে!