ফাইল চিত্র।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জট খুলবে কে?
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সেখানে আট দিন ধরে চলছে ছয় পড়ুয়ার অনশন ও অন্যদের আন্দোলন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক জন অভিভাবকও। কিন্তু কেউ জানেন না, আন্দোলনের শেষ কোথায়। কারণ, রাজ্য প্রশাসন না কলেজ— নির্বাচনের দায়িত্ব কার, পরবর্তী নির্দিষ্ট দিনই বা কারা ঘোষণা করবে, এ সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কোনও তরফেই।
এ দিন সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্য দিকে, এ দিনও স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করেন কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস ও উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী। পরে অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ছাত্রদের দাবি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলাম। সমস্ত কিছু কলেজ কাউন্সিলের হাতে নেই। সিদ্ধান্ত উপরমহল থেকে আসবে। আশা রাখছি, সুরাহা হবে।’’ তাঁর দাবি, নির্বাচন হবে না, এমনটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলেননি। তাঁরা জানিয়েছিলেন, অনশন তোলা হোক। তার পরে ২২ ডিসেম্বরের পরিবর্তে কবে নির্বাচন হবে, সেই তারিখ ঠিক করা হবে।
যদিও সেই প্রস্তাব মানতে নারাজ পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’ কিন্তু সেই ঘোষণার দায়িত্ব কে নেবেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘পড়ুয়ারা এবং নবান্ন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আন্দোলন কি আরও দীর্ঘায়িত হবে না?’’ দিনকয়েক আগে স্বাস্থ্যসচিব নিজে এসে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পরদিন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আসেন। এ দিন অভিভাবকদের প্রতীকী অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি চন্দ্রিমা। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিব ঘুরে যাওয়ার পর থেকে পড়ুয়ারা অভিযোগের আঙুল তুলছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে।
অর্থাৎ, এর মধ্যে সরাসরি রাজনীতির যোগ উঠে আসছে। আবার অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনও সমর্থন করছে পড়ুয়াদের এই আন্দোলনকে। পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এ দিন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘যে ভাবে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে, তা অগণতান্ত্রিক। তৃণমূলের স্বৈরাচারী পদক্ষেপের নিন্দা করছি।’ গত বছর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজেও এমন আন্দোলন দেখেছিল রাজ্য। শেষে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শহরের একাধিক বরিষ্ঠ চিকিৎসকের প্রশ্ন, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য ও পঠনপাঠনের দিকটি ভেবে প্রশাসন কেন সুসংহত ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কেন দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়াচ্ছে? তাঁরা বলছেন, ‘‘ছাত্রদের দাবি অন্যায্য নয়। সরকারের কথাও ফেলে দেওয়ার নয়। দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারেন, এমন কাউকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না? কলকাতা মেডিক্যালের ছাত্র সংসদের প্রাক্তনীদেরও তো দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’’
এ দিন সকাল ৯টা থেকে পড়ুয়াদের অনশন মঞ্চের সামনে এসে বসেন কয়েক জন অভিভাবক। তাঁদেরই এক জন প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কেন কোনও ভূমিকা পালন করছে না, সেটাই অবাক লাগছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচন হয়। এখানেও ছেলেমেয়েরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে চেয়ে তো ভুল করেনি।’’ অসুস্থ ছাত্র ঋতম মুখোপাধ্যায়ের বাবা শুকনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ছেলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। দিনের পর দিন ওঁদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সেগুলির সমাধানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি তুলেছে। তাকে সমর্থন জানাচ্ছি।’’
অভিভাবকদের অভিযোগ, অনশনকারীদের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ দিকে আন্দোলনের জেরে পড়াশোনায় কিছুটা হলেও খামতি হচ্ছে, জানাচ্ছেন শিক্ষক-চিকিৎসকেরাও। একই বক্তব্য অভিভাবকদেরও। তাঁদের প্রশ্ন, এই ক্ষতির দায় কার? অভিভাবক ও চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ‘‘অচলাবস্থা কাটতে হস্তক্ষেপ করুন মুখ্যমন্ত্রী।’’