পুত্রহারা: মহম্মদ জাহাঙ্গির। নিজস্ব চিত্র
শহর ও শহরতলি জুড়ে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য বহুতল। সেই সব বহুতলে কার্যত প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। দেওয়াল রং করার সময়ে বা এসি লাগাতে গিয়ে দুর্ঘটনাও আকছার ঘটে। সম্প্রতি হাওড়ার শিবপুরের একটি বহুতলে এসি লাগাতে গিয়ে ছ’তলা থেকে পড়ে মারা যান মোবাস্সির সিদ্দিক (২৪) নামে এক যুবক। যে ঘটনার সূত্রে ফের প্রশ্ন উঠেছে এই ধরনের মিস্ত্রি বা শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে। যে সংস্থার হয়ে ওই কর্মীরা এমন বিপজ্জনক কাজে নামেন, তাদের কি তা হলে কোনও দায় নেই? উঠছে এমন প্রশ্নও।
রাজাবাজারের হারসি স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকায় মোবাস্সিরদের বাড়ি। বুধবার দুপুরে বাড়ির সামনেই বসে ছিলেন সদ্য পুত্রহারা মহম্মদ জাহাঙ্গির। তাঁকে ঘিরে প্রতিবেশীরা। আফশোসের সুরে জাহাঙ্গির বললেন, “ও যখন কাজে যেত, তখন বার বারই জিজ্ঞাসা করতাম, ছাদের কার্নিসে উঠে এসি সারানোর কাজ করিস। কোমরে সেফটি বেল্ট, মাথায় হেলমেট পরিস তো? ছেলে কিন্তু বলেছিল, সেফটি বেল্ট পরে। তা হলে ওই ঘটনা ঘটল কেন? যে সংস্থার হয়ে ও কাজ করছিল, তারা কি সে দিন ওকে বেল্ট পরায়নি?”
মাস ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল মোবাস্সিরের। পাড়ায় তাঁর ডাকনাম ছিল চিন্টু। মাস কয়েক আগে নারকেলডাঙা নর্থ রোড থেকে রাজাবাজারে চলে এসেছিল চিন্টুর পরিবার। জাহাঙ্গির বলেন, “ওর স্ত্রীকে সামলানো যাচ্ছে না। চিন্টুর মা-ও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।” প্রতিবেশী নুর আলম বললেন, “কাজের সময়ে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই যেখানে জীবন বেঁচে যায়, সেখানে তা করা হবে না কেন? যে সংস্থার হয়ে চিন্টু কাজ করছিল, তারাও এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না।”
জাহাঙ্গির জানান, মহম্মদ ইমতিয়াজ নামে এক ব্যক্তির অধীনে কাজ করতেন চিন্টু। সে দিন ইমতিয়াজের সঙ্গেই কাজে গিয়েছিলেন তিনি। ইমতিয়াজই তাঁদের ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দিয়েছিলেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে জাহাঙ্গির দেখেন, সব শেষ।
ইমতিয়াজকে ফোন করা হলে তিনি দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে সেফটি বেল্ট ছিল। তবে হেলমেট ছিল না। সকলেই সেফটি বেল্ট পরে কাজ করছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। তা হলে এই দুর্ঘটনা ঘটল কেন? ইমতিয়াজ বলেন, “ছ’তলার একটি কার্নিসের উপরে লোহার খাঁচার মধ্যে এসি-র বাইরের দিকের যন্ত্রটি বসানো ছিল। আমরা তখন খেতে নেমেছিলাম। চিন্টুই শুধু নামেনি। কিছু কাজ বাকি ছিল। খানিক পরেই ওই আবাসনের এক রক্ষী এসে দুর্ঘটনার খবর দেন। আমরা ছুটে গিয়ে দেখি, চিন্টু রক্তাক্ত অবস্থায় নীচে পড়ে রয়েছে।”
মোবাস্সিরদের প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, চিন্টুকে ওই রকম বিপজ্জনক অবস্থায় একা ফেলে বাকিরা খেতে চলে গেলেন কী ভাবে? চিন্টু সেফটি বেল্ট পরেছিলেন কি না, সেটাও কি কারও নজরে ছিল? তা ছাড়া, কর্মীদের জন্য হেলমেটই বা থাকবে না কেন? ইমতিয়াজের দাবি, ওই কার্নিসে নেমে যখন তাঁরা কাজ করছিলেন, তখন সকলেরই বেল্ট পরা ছিল। কিন্তু তাঁরা খেতে আসার পরে কী ঘটেছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়।